টানা বর্ষার জমা জলে বন্দি শহরবাসী
দৃশ্য এক, দিনহাটা শহরের স্টেট ব্যাঙ্ক চত্বর থেকে পুরানো বাসস্ট্যান্ড মোড় পর্যন্ত রাস্তা নদীর চেহারা নিয়েছে। শহরের থানা পাড়ার সর্বত্র হাঁটু জল জমে রয়েছে। গোপালনগর, শীতলাবাড়ি, গোধূলিবাজার এলাকায় রাস্তায় জল দাঁড়িয়েছে।
দৃশ্য দুই, কোচবিহার শহরের সুনীতি রোডের হরিশ পাল চৌপথী থেকে পুরানো বাসস্ট্যান্ড মোড় পর্যন্ত এক ফুট জল দাঁড়িয়েছে। কেশব রোড, ব্যাঙচাতরা রোড, কালিকাদাস রোড, কলাবাগানের রাস্তা জুড়ে জল থৈ থৈ চেহারা। বৃহস্পতিবার টানা বৃষ্টির জেরে কোচবিহার ও দিনহাটা পুরসভার প্রায় গোটা এলাকা জুড়ে একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। আর তাতেই ওই দুই শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল পরিকাঠামো স্পষ্ট হয়ে গেল। ওই ঘটনার দায় নিয়ে পুরসভার শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, প্রবল বৃষ্টিতে তুফানগঞ্জে দেওচড়াইয়ে গদাধর নদীর বাঁধ ভেঙে কিছু এলাকায় জল ঢুকেছে। কোচবিহারে তোর্সা বাঁধের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগে রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত থেকে জেলাজুড়ে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। এদিন দিনভর কখনও মুষলধারায়, কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কোচবিহার সদরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪২ মিমি ও দিনহাটায় ২৪৪ মিমি। জেলার অন্য দুই মহকুমা তুফানগঞ্জে ৫৭ মিমি, মেখলিগঞ্জে ৮০ মিমি বৃষ্টি হয়। কোচবিহার ও দিনহাটা শহরের বাসিন্দারা জানান, দিনহাটার ১৫ টি ওয়ার্ডেই জল দাঁড়িয়ে যায়। থানা পাড়া, গোধূলিবাজার, শীতলাবাড়ি, দোলাবাড়ি, বাবু পাড়া, গোসানি রোড, বলরামপুর, মদনমোহন পাড়া, বোর্ডিং পাড়া, শহিদ কর্নার, গোপালনগরের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। দিনহাটা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্থনাথ সরকার বলেন, “শহরের নিকাশির হাল ফেরাতে এতদিনেও পুরবোর্ড কোনও কাজ করেনি। ওই ব্যর্থতার জেরেই এদিন গোটা শহরের সব ওয়ার্ডেই জল জমে গিয়েছে।” দিনহাটা পুরসভার ফরওয়ার্ড ব্লক চেয়ারম্যান চন্দন ঘোষ বলেন, “নিকাশি আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত টানা বৃষ্টির জন্য এবারে ১৫ টি ওয়ার্ডের ২০ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন।” সেই সঙ্গে পুরসভা চেয়ারম্যানের অভিযোগ, রাজ্য পুর দফতরকে দিনহাটার জন্য ‘মাস্টার প্ল্যান’ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। কোচবিহার পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শহরের সুনীতি রোড, বিশ্বসিংহ রোড, কেশব রোড, কালিকাদাস রোড, বাদুরবাগান, কলাবাগান, স্টেশন রোড, নিউটাউন, নতুন বাজার সর্বত্র রাস্তার ওপর জল দাঁড়িয়ে যায়। ওই পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “গোটা পুরসভা এলাকা জলমগ্ন। নিকাশির আধুনিকীকরণ করা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় ওই অবস্থা হয়েছে। শহরের ৪০ শতাংশ বাড়িতে ঘরে জল ঢুকেছে। তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করেছি।” কোচবিহারের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা আহমেদ বলেন, “বৃষ্টির পরিমাণ অত্যাধিক বেশি বলেই সমস্যা হয়েছে। বিকল্প হাইড্রেনের কাজ শেষ হলে সমস্যা অনেকটা মিটবে। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ত্রাণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।” প্রবল বৃষ্টিতে কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমার গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তুফানগঞ্জের দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাঘাটে গদাধরের ১০ মিটার মাটির বাঁধ ভেঙে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় বিডিও তাপস সিংহরায় জানিয়েছেন। সকাল ৭ টা নাগাদ ধলুয়াবাড়ির কাছে মাটি ধসে রাস্তায় গাছ উপড়ে পড়ায় ৮ ঘন্টা কোচবিহার-দিনহাটা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। কোচবিহার সদরে জিরানপুর, পানিশালা, চাঁদমারি সহ বিভিন্ন রাস্তায় জল দাঁড়িয়েছে। কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। সদরের মহকুমাশাসক সুপর্ণ রায়চৌধুরী জানান, কোচবিহার ১ ব্লকে ঘুঘুমারি, চিলকিরহাটে বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ায় ৬৮ পরিবার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.