সিরিয়ার পরিস্থিতি জানিতে হইলে বিশ্বের দুইটি প্রান্তে নজর রাখিতে হইবে। জেনিভায় কী হইল? এবং, কায়রোয় কী হইল? জেনিভায় সিরিয়ার পরিস্থিতি লইয়া একটি আন্তর্জাতিক অধিবেশন চলিতেছিল। তাহা, কার্যত, বিশেষ ফলপ্রসূ হইবার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায় নাই। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য-রাষ্ট্র ছাড়াও তুরস্ক, কাতার, ও কুয়েত বৈঠকে উপস্থিত ছিল। ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জ, আরব লিগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিরা। সকলেই একমত হইয়াছেন, সিরিয়ার অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপের দিকে চলিতেছে। এই বিষয়ে দ্বিমত হইবার উপায়ও ছিল না। কী করিয়া এই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়, তাহাই প্রশ্ন। এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনও ফলদায়ী আলোচনা হয় নাই। সিরিয়ার পালাবদলের পথ প্রশস্ত করিবার জন্য একটি সরকার গঠন প্রয়োজন, এবং তাহাতে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী উভয় তরফেরই প্রতিনিধি থাকিবেন, এই মর্মে একটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। ইহার কার্যকারিতা লইয়া প্রশ্ন উঠিতেই পারে। কারণ, দুইটি পরস্পর-বিরোধী নৌকায় পা রাখিলে কত দূর অগ্রসর হওয়া যাইবে, তাহা গভীর বিবেচনার বিষয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে লইয়াও অস্পষ্টতা প্রবল। গৃহীত প্রস্তাবে যে আসাদকে পদত্যাগ করিবার কথা বলা হয় নাই, তাহাকে একটি গোষ্ঠী রুশ বিদেশনীতির জয় হিসাবেই দেখিতেছেন। কারণ, আসাদ-এর জমানা মস্কোর মিত্র বলিয়াই পরিচিত। প্রস্তাবিত নূতন জমানায় যে আসাদকে বাতিল করিবার কথা এখনও পর্যন্ত আসিল না, তাহাই সম্মেলনের ভিতরে বিভাজন ঘটাইয়া দিয়াছে। সুতরাং, জেনিভা সম্মেলনের ফল অস্পষ্ট।
অতঃপর কায়রো। সেই স্থানে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর বিরোধিগণ সমবেত হইয়াছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সম্মুখে নিজেদের একটি সমন্বিত মুখ তুলিয়া ধরা। উদ্দেশ্য সাধিত হওয়া দূরস্থান, বরং বিরোধী পক্ষে নিহিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও মুখব্যাদান করিয়াছে। সমবেত আড়াই শত প্রতিনিধি কয়েকটি বৃহত্তর বিষয়ে একমত হইয়াছেন। আবারও, সেই সব বিষয়ে তাঁহাদের পক্ষে ভিন্নমত হওয়া কঠিন ছিল। যেমন, একটি মুক্ত সিরীয় সৈন্যবাহিনী গঠন, ক্ষমতাসীন ‘বাথ পার্টি’র শাসনের ইতি এবং পালাবদলের সরকার হইতে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসাদ এবং তাঁর সহযোগীদের দূরে রাখা ইত্যাদি। কিন্তু, কী ভাবে এই সব কার্য সম্পন্ন হইবে, সেই মৌলিক প্রশ্নেরই কোনও সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায় নাই। তুমুল বাদানুবাদ, কুর্দ প্রতিনিধির অধিবেশন-ত্যাগ, প্রতিনিধিদের তরফে নিজস্ব স্বার্থ বজায় রাখিবার আপ্রাণ প্রয়াস আসাদ-বিরোধীদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় নাই। বরং, ক্ষমতা পাইলে যে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীও একটি সমন্বিত সরকার গঠনে সক্ষম, সেই কথাটি দুনিয়ার সম্মুখে প্রতিষ্ঠিত করিবার একটি সুযোগ হাতছাড়া হইয়াছে। মতবিরোধ নানা ভাবে প্রকট। সমন্বিত লক্ষ্যপূরণের জন্য সিরীয় জাতীয় পরিষদ একটি নূতন কমিটির হস্তে ক্ষমতা প্রদানে আগ্রহী। তাহা লইয়া কাজিয়া বিস্তর। সশস্ত্র বিদ্রোহের ধারণা লইয়াও মতভেদ। আসাদ সরকারকে কী ভাবে সরানো হইবে, মসৃণ রূপে না বলপ্রয়োগ মারফত, তাহাও বিতর্কের বিষয় হইয়াছে। অর্থাৎ, সম্মেলনের মৌলিক উদ্দেশ্যটিই কার্যত মাঠে মারা যাইল। সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকের দুর্ভোগ কমিবে, এমন সম্ভাবনা এই মুহূর্তে ক্ষীণ। বিশ্ব-রাজনীতির দড়ি টানাটানি চলিতেছে। সিরিয়ার রক্তস্নানও অব্যাহত। |