সম্পাদকীয় ১...
উত্তরসাধনা
শেষ হইল বিজ্ঞান গবেষণায় এক দীর্ঘ পর্ব। সন্তোষজনক উত্তর মিলিল এক প্রশ্নের। জানা গেল, পদার্থের ভরের মূলে সত্যই খেলা রহিয়াছে একটি কণার। কণাটি কী, তাহার চরিত্রই বা কেমন, ইত্যকার বিষয়ে গবেষণা জারি রহিবে। সেই অর্থে, অন্বেষণ শেষ হইয়াও হইবে না শেষ। ইহাই বিজ্ঞানের রীতি। বিজ্ঞান চলুক তাহার রীতি মানিয়া, সাধারণ আগ্রহী নাগরিকের নিকট প্রশ্ন ও উত্তরই শেষ কথা। জেনিভার অদূরে সার্ন গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা একটি গূঢ় প্রশ্নের উত্তরে উপনীত হইয়াছেন, চিনিয়াছেন ভর সৃষ্টির মূলে বিশেষ কণাটিকে, এই সংবাদই আমজনতার নিকট একটি বড় ব্যাপার। বিজ্ঞানীদের সাফল্য লইয়া চারিদিকে বড় শোরগোল, নানা পিঠ-চাপড়ানি। কিন্তু একটি প্রশ্ন থাকিয়াই যায়। বিজ্ঞানে কি দেশ ও কালের প্রভেদ আছে? বিজ্ঞান কি সর্বজনীন, না কি নানা প্রাচীরে বিভক্ত?
প্রশ্নগুলি উঠিল এই কারণে যে, সাফল্যে সাধুবাদের আন্তর্জাতিক আসরে ভারতের নাম খুব একটা শোনা যাইতেছে না। অথচ, গভীর বিচারে সেই নামটি বিশেষ ভাবে উচ্চারিত হইবার যোগ্য। বস্তুর ভরের মূলে যে কণাটি চিহ্নিত হইয়াছে, তাহার নামের সঙ্গে জড়িত এক জন ভারতীয়। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসু। আলবার্ট আইনস্টাইন পর্যন্ত তাঁহার লিখিত গবেষণাপত্রে গভীর ভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। বস্তুত, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ যে কৃতিত্ব দেখাইয়াছিলেন, তাহা বিশ্ববিজ্ঞান চিরকাল মনে রাখিবে। ব্রহ্মাণ্ডে কণা মাত্র দুই গোত্রের। ইতালির বিজ্ঞানী এনরিকো ফের্মি-র নাম অনুযায়ী এক গোত্রের কণাকে বলা হয় ফের্মিয়ন, আর অন্য জাতের কণারা সত্যেন্দ্রনাথের নাম অনুসারে হইল বোসন। সার্ন গবেষণাগারে যে কণাটির সন্ধান মিলিয়াছে, তাহা শুধু বোসন নহে, এযাবৎ আবিষ্কৃত বোসনকুলে সর্বাপেক্ষা ভারী। সুতরাং, সাম্প্রতিক সাফল্যে ভারতের অবদান স্মরণ করিতেই হয়। শুধু অতীত কৃতিত্বের কথা বলিলেই চলিবে না, বর্তমান কালের অবদানও স্মরণযোগ্য। বিশ্ববিজ্ঞানে ভারত এখন আর দর্শক মাত্র নহে, রীতিমত অংশগ্রহণকারীও বটে। পাহাড়প্রমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করিয়া বিজ্ঞানীরা নূতন বোসন কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হইয়াছেন। ওই তথ্য সংগ্রহে, এবং তাহার বিশ্লেষণে, এ দেশের বহু বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন। বিজ্ঞানের বিশ্বযজ্ঞে ভারত যে গুরুত্বপূর্ণ অংশী, ইহা তাহার প্রমাণ।
আবিষ্কৃত নূতন বোসন কণাটি পদার্থবিজ্ঞানী মহলে উন্মাদনা সৃষ্টি করিয়াছে বিশেষ একটি কারণে। শুধু পদার্থের ভরের ব্যাখা নহে, এই কণাটি ব্যাখা দিতে পারে ব্রহ্মাণ্ডের আরও বড় এক রহস্যের, যে রহস্যের ইঙ্গিত প্রথম মিলিয়াছিল ১৯৯৮ সালে। সে সময়ের আগে পর্যন্ত গবেষকেরা জানিতেন, এই ব্রহ্মাণ্ডের এক বিরাট পরিমাণ পদার্থ নিখোঁজ। ১৯৯৮ সালে এক বিশেষ আবিষ্কারের পর তাঁহারা বুঝিলেন, ব্রহ্মাণ্ডের মোট ভরের ৯৬ শতাংশই নিখোঁজ। গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি, অর্থাৎ অদ্যাবধি শনাক্ত পদার্থকুল, ব্রহ্মাণ্ডের মাত্র ৪ শতাংশ। নিকোলাস কোপারনিকাস ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র হইতে মানুষকে বিদায় জানাইতেই মহা শোরগোল উঠিয়াছিল। উঠিবেই, কারণ মানুষের চিন্তায় উহা ছিল প্রবল এক ধাক্কা। ১৯৯৮ সালের আবিষ্কারও তেমনই আরও এক আঘাত। শুধু ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রচ্যুত হওয়া নহে, গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি সমাহার বা ব্রহ্মাণ্ড বলিয়া যাহাকে এতকাল চিনা গিয়াছে, তাহাও সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড নহে, তাহারই ক্ষুদ্র এক অংশ মাত্র! ইহার অধিক বেদনার আর কী হইতে পারে? বেদনা মানিয়া লইবার পরেও যাহা বাকি থাকে, তাহা ব্যাখ্যা। ব্রহ্মাণ্ডের নিখোঁজ ৯৬ শতাংশ কোথায় লুকাইয়া আছে? কী রূপেই বা? এই সব প্রশ্নের উত্তর নাকি মিলিবে সদ্য-আবিষ্কৃত বোসন কণার চরিত্র বুঝিলে। সেই কাজে অতঃপর ব্যস্ত হইবেন বিজ্ঞানীরা। সত্যেন্দ্রনাথের উত্তরসূরিরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.