পাক সফর পিছোল কৃষ্ণের
দিল্লির চাপেও সন্ত্রাসের দায় মানছেই না পাকিস্তান
লোচনার পথ প্রশস্ত করে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে পাকিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়ালো ভারত। বিদেশসচিব পর্যায়ের গত দু’দিনের বৈঠকে আবু হামজার কাছ থেকে পাওয়া মুম্বই সন্ত্রাস সংক্রান্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানির হাতে। ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করতে হলে যে মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যতামূলক সে কথা স্পষ্টভাষায় জিলানিকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই। ইসলামাবাদের তরফে অবশ্য ভারতের তোলা পাক-যোগের বিষয়টি যথারীতি অস্বীকার করা হয়েছে। এর মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর পাক সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ‘ফলপ্রসূ’ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর প্রস্তাবিত পাক সফরও আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথা ছিল, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইসলামাবাদ যাবেন কৃষ্ণ। কিন্তু আজ তিনি জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে যাবেন তিনি। ভারত মনে করছে, ইসলামাবাদ সন্ত্রাস দমনে ‘চোখে পড়ার’ মতো কোনও পদক্ষেপ না-করলে, পাক সফর অনর্থক। আপাতত তাই পাকিস্তান কী করে তা দেখার জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় হাতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম গতকালই জানিয়েছিলেন, হামজাকে দেরা করে এটা স্পষ্ট যে, মুম্বই সন্ত্রাসের পিছনে পাকিস্তানের ‘সরকারি মদত’ রয়েছে। বৃহস্পতিবারও কলকাতায় চিদম্বরম নিজের বক্তব্যে অনড় থেকে জানান, “পাকিস্তানের যতটা যোগ পাওয়া গিয়েছে, তা সে দেশের সরকারকে জানানোও হয়েছে।” দিল্লিতে অবশ্য পাক বিদেশসচিব প্রকাশ্য সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে মুম্বই সন্ত্রাসের যোগ থাকার এই অপবাদকে আমি প্রবল ভাবে খারিজ করছি।” কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সর্বসমক্ষে পাকিস্তান মুম্বই হামলায় তাদের যোগ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নেবে, এমনটা কখনওই আশা করেনি সাউথ ব্লক। ফলে এ বিষয়ে জিলানির আজকের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত নয় ভারতের কাছে।
বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের সঙ্গে পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানি। নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি
চাপানউতোর থাকলেও বিদেশসচিব পর্যায়ের এই বৈঠক যে ব্যর্থ হয়েছে, এমনটা মনে করছে না বিদেশ মন্ত্রক। কেন না, আজ হায়দরাবাদ হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অথবা ভারত-পাক যৌথ বিবৃতিতে জিলানি খোলাখুলি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের কথা বলেছেন। এমনকী মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে যৌথ তদন্তের কথাও বলেছেন তিনি। যৌথ বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ‘দু’দেশের বিদেশসচিবই একমত হয়েছেন যে, সন্ত্রাসবাদই শান্তি এবং সুস্থিতির প্রশ্নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে জোরদার করার প্রশ্নে দু’দেশই তাদের পুরনো প্রতিশ্রুতিকে আবারও তুলে ধরেছে।” রঞ্জন মাথাই বলেছেন, “ইসলামাবাদে ২০১২ সালের মে মাসে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আবু জিন্দলকে গ্রেফতার করার পর তাকে জেরা করে যা জানা যাচ্ছে, তার ফলে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। পাক বিদেশসচিব জিলানিকে আমি সব তথ্যই দিয়েছি।”
বিদেশসচিব স্তরের বৈঠকের পাশাপাশি দিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যেও বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিএসএফের তরফে পাক রেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে গুলিচালনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাক-স্নাইপারের গুলিতে সম্প্রতি দুই বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাক রেঞ্জার্সের প্রধান, মেজর জেনারেল রিজওয়ান আখতার বলেন, “সীমান্তে গুলিবিনিময় কমানোর জন্য শীর্ষবৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা দু’তরফের সব জওয়ানকেই মেনে চলতে বলা হবে।” পঞ্জাব এলাকায় হেরোইন-সহ বিভিন্ন মাদকের চোরাচালান হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে বলে কেন্দ্রকে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। সে বিষয়টিও আজ বৈঠকে ওঠে। পাকিস্তানের দিক থেকে জাল নোটের ঢালাও আমদানির বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল ইউ কে বনসল। পাক রেঞ্জার্সের প্রধান অবশ্য এই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। আখতারের যুক্তি, “এটা ঠিক নয় যে, পাকিস্তানের দিক থেকে জাল নোট পাচার হচ্ছে। জাল নোট পৃথিবীর যে কোনও জায়গাতেই তৈরি হতে পারে। ভারতেও হতে পারে!”
বৈঠকে সর্বজিৎ সিংহের মুক্তির বিষয়টিও তুলেছেন ভারতের প্রতিনিধিরা। ইসলামাবাদকে ভারতীয় বিদেশসচিব জানিয়েছেন, সর্বজিৎকে নিয়ে জাতীয় আবেগ তৈরি হয়েছে। মানবিক দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনা করে সর্বজিৎকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি দিক পাকিস্তান। জিলানি আশ্বাস দিয়েছেন দেশে ফিরে পাক নেতৃত্বকে তিনি বিষয়টি জানাবেন।
বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর চলতি মাসের প্রস্তাবিত পাক সফর বাতিল নিয়ে কূটনৈতিক মহলে নানা কথা উঠছে ঠিকই। কিন্তু ঘটনা হল, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন পাকিস্তান যাওয়ার উপযুক্ত সময় নয়। সামনেই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এমনিতেই বিভিন্ন সমস্যায় কোনঠাসা হয়ে রয়েছে সরকার। সর্বজিতের মুক্তি বা মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যদি কৃষ্ণ পাক-সফরে যান, তা হলে বিরোধীদের প্রশ্নের সামনে পড়তে হবে সরকারকে। তাই আপাতত স্থির হয়েছে, সেপ্টেম্বরে কৃষ্ণ পাকিস্তানে যাবেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী সে তারিখও পিছোতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.