২২ মাস আগে রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, রেলের কাজের জন্য কাউকে উৎখাত করা হবে না। দখলদারদের দাপটে দমদমে মেট্রো রেলের একাংশের কাজ পুরোপুরি আটকে গিয়েছে। তার সমাধানসূত্র খুঁজে না পেয়ে এখনও সমস্যায় প্রশাসন। মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে গত এক বছরে বিভিন্ন স্তরে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজ এগোয়নি।
দমদমে জেসপ সংস্থার পুরনো রেললাইনের ধার দিয়ে যাওয়ার কথা এই মেট্রোর। প্রয়োজনীয় জায়গা চিহ্নিত হয়েছে আগেই। কিন্তু সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সে কাজ করতে গেলে উত্তরাংশে সুভাষনগর থেকে সরাতে হবে ৭০০টি ঘর। যার মধ্যে কিছু পাকা বাড়িও রয়েছে। একই ভাবে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে লাইনের পাশে কাজের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরও ২৮টি ঘর। বাসিন্দারা জানান, তাঁদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা রূপায়ণের চেষ্টা হচ্ছে না।
গত বছর জানুয়ারিতে দমদম থেকে বারাসত পর্যন্ত ১৮.১৩ কিলোমিটার অংশে মেট্রো রেলের কাজের শিলান্যাস হয়। বরাদ্দ হয় ২৩৯৭ কোটি টাকা। মেট্রো সূত্রের খবর, বাগজোলা খাল থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্টে চক্ররেলের লাইন পর্যন্ত অংশে দখলদারির সমস্যাই এখন কাজের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে এই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু সে কাজ শুরুই করা যায়নি। মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “ওই অংশে যে সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সেখানে কাজ হচ্ছে। বাকি অঞ্চলে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” |
দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা হরেন্দ্র সিংহ বলেন, “দফায় দফায় বৈঠকের পরে আমার অঞ্চলে, মানে বিনয়পল্লির বাসিন্দাদের সাময়িক পুনর্বাসন দিয়ে কাজ করা এবং পরে পুরনো জায়গায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও নির্মাতা সংস্থা চুপ করে আছে।” নির্মাতা সংস্থার প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রান্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সবের জন্য দুই পর্যায়ে মোট ৪৭ লক্ষ টাকা আমাদের দিতে বলা হচ্ছে। তা কোথা থেকে দেব?”
অদূরেই সুভাষনগর। গোপাল হালদার, সুভাষ মণ্ডলের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “পাঁচ দশকের উপরে আমরা এখানে আছি। প্রথম থেকেই বলছি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলে সব উন্নয়ন-প্রকল্পে আমরা সহযোগিতা করব। প্রশাসন ব্যবস্থা করতে না পারলে আমাদের দোষ দিয়ে কী হবে?” দক্ষিণ দমদম পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদার বলেন, “প্রকল্পের জন্য যাঁদের সরাতে হবে, তাঁদের মেট্রো, পূর্ব রেল এবং বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু স্বার্থান্বেষীরা এতে বাগড়া দিচ্ছে।”
এর সমাধানে রেলকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়। তিনি বলেন, “রেল নীতিগত ভাবে দখলদারদের পুনর্বাসনের টাকা দেয় না। কিন্তু এটা সাময়িক পুনর্বাসন। মেট্রোর স্তম্ভ হয়ে গেলে আবাসিকদের ফিরিয়ে আনা যায়। তাই দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ওঁকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেছিলাম। মুকুল রায়কেও জানিয়েছি। প্রকল্পের কাজে যত দেরি হবে, ততই খরচ বাড়বে। বাড়বে অনিশ্চয়তাও।” জবরদখলের জন্য মেট্রোর কাজ যে মার খাচ্ছে, তা স্বীকার করে রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা না চাইলে কাজ হবে না। আমরা তো লাঠি মেরে উচ্ছেদ করতে পারব না। উন্নয়নের গুরুত্ব ওঁদের অনুভব করতে হবে।” অন্য দিকে, জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর প্রস্তুতি পর্বে কিছুটা অগ্রগতি হল। খিদিরপুরের পর থেকে সেনাবাহিনীর জমির তলা দিয়ে বিবাদী বাগ পর্যন্ত মেট্রো নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে সমীক্ষা আটকে দিয়েছিল, তার অনুমোদন মিলেছে।
বৃহস্পতিবার মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যুষ ঘোষ জানান, সমীক্ষা নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছিল, তা কেটেছে। খিদিরপুরের পর থেকে বি বা দী বাগ পর্যন্ত বেশিটাই সেনাবাহিনীর এলাকা। সেই জমির তলা দিয়ে মেট্রো নিয়ে যেতে হলে সমীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু এত দিন তাঁরা রাজি না হওয়ায় ওই কাজ করা যায়নি। এ বার কাজ শুরু হবে।
জোকা থেকে খিদিরপুর হয়ে মেট্রোর লাইন পার্ক স্ট্রিট ঢুকবে। বর্তমানে যে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন আছে, সেখানেই কানেক্টর হবে দমদম-কবি সুভাষ রুটের মেট্রোর সঙ্গে। এর পরে মাটির তলা দিয়েই তা পৌঁছবে বি বা দী বাগ পর্যন্ত। |