|
|
|
|
সনিয়ার সায়, ফের সংস্কারে সক্রিয় মনমোহন |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
সনিয়া গাঁধীর সবুজ সঙ্কেত নিয়ে থমকে থাকা আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি ফের শুরু করতে চাইছেন মনমোহন সিংহ। অর্থ মন্ত্রকের ভার হাতে নেওয়ার পরে সংস্কারকেই সব চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে দলের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি শরিকি রাজনৈতিক বাধা দূর করতেও উদ্যোগী হচ্ছে তাঁর সরকার।
দেশে মন্দার যে সব কারণ চিহ্নিত করেছে শিল্পমহল, তার অন্যতম হল আর্থিক সংস্কার প্রসঙ্গে সরকারের নীতি-পঙ্গুত্ব। শরিকি রাজনীতির চাপে দীর্ঘদিন সংস্কারের পথে এগোতে পারেনি সরকার। এ বার সেই বাধা কাটাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। যার প্রথম ধাপ হতে পারে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়া। যে ব্যাপারে এক বার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। পাশাপাশি, এই সংক্রান্ত একটি খসড়া ক্যাবিনেট নোটও বিলি করা হবে বলে খবর।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ বিমানে অসমের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সনিয়া। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, যাওয়া-আসার পথে বিমানে সনিয়া-মনমোহন দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তার পর দিল্লি ফিরে সে দিনই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন সনিয়া। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তা জানান, সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। সনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়েছেন, অর্থনীতিকে বৃদ্ধির পথে ফেরানোই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কেননা, খাদ্য সুরক্ষা আইনের মতো সামাজিক কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস যে সার্বিক বৃদ্ধির কথা বলছে, আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়া তা সম্ভব নয়।
তবে প্রধানমন্ত্রী সনিয়াকে এ-ও বলেছেন, ‘রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা’ বুঝেই তিনি সংস্কারের পথে এগোবেন। আজ একটি ইংরেজি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বেশ কিছু নীতি নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা দরকার। কারণ, বেশ কিছু নীতি নিয়ে বড়সড় মতভেদ রয়েছে।” সংঘাত যাতে তীব্র না হয়, সে জন্য ঠিক হয়েছে প্রথমে এমন বিষয় নিয়ে এগোনো হবে যা রূপায়ণের জন্য সংসদের অনুমোদন দরকার নেই। প্রশাসনিক নির্দেশেই করা যেতে পারে। সেই তালিকায় সর্বাগ্রে রয়েছে খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি লগ্নি।
গত নভেম্বরে এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু শরিক তৃণমূল ও বিরোধীদের চাপে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিতে বাধ্য হয় সরকার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্ব মিটতে না-মিটতেই সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মতেও, এই ছাড়পত্র দেশে বিনিয়োগের বাতাবরণ অনেকটাই ইতিবাচক করে তুলতে পারে। বস্তুত, সরকারের ইচ্ছার ইঙ্গিত পাওয়ার পরেই আজ মুম্বই শেয়ার বাজারে খুচরো ব্যবসায়ে যুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার দর বেড়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, বিমানে মনমোহনের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে এগোনোর ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেন সনিয়া। কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভির কথায়, “খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ লগ্নির জন্য সওয়াল করেছিলেন রাহুল গাঁধীও। সুতরাং সরকার সিদ্ধান্ত নিলে কংগ্রেস সমর্থন জানাবে।”
তবে খুচরো ব্যবসা নিয়ে এগোতে চাইলেও বিমান পরিষেবায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না সরকার। কেননা, এ ব্যাপারে দল ও মন্ত্রিসভার মধ্যেই আপত্তি রয়েছে। তার বদলে ব্যাঙ্ক, বিমা, পেনশন বিলগুলি বাদল অধিবেশনে পাশ করানোর চেষ্টা চালাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সচিবালয়ের এক কর্তার কথায়, “এই বিলগুলি পাশ করানো কংগ্রেসের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করবে। তাই অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিলগুলিকে একটু পিছনের দিকে রাখা হয়েছে। মমতা ও মুলায়ম এই দু’জনের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই বিলগুলি পাশ করানোর চেষ্টা হবে।” |
|
|
|
|
|