বোমায় তৃণমূল কর্মীর ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার মঙ্গলকোটের ন’পাড়া গ্রামে নিহত হন লাল্টু মল্লিক নামে ওই যুবক। পুলিশ জানায়, নিহতের স্ত্রী এই ঘটনায় ২৯ জনের নামে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতেই বুধবার রাতে পাঁচ জনকে ধরা হয়েছে।
বুধবার সকালে মঙ্গলকোটের ঝিলু পঞ্চায়েতের ন’পাড়া গ্রামে একশো দিনের কাজে পুকুর খোঁড়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাশেম কাজির অনুগামীরা অন্য গোষ্ঠীর এক সমর্থককে মারধরে করে। এর পরেই বোমা-বন্দুক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ে তৃণমূল কর্মী জিয়ার মল্লিকের ভাই লাল্টু মল্লিক দাদাকে গণ্ডগোল থেকে সরিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতে গেলে বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। লাল্টু মুম্বইতে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। বুধবার দুপুরেই তাঁর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। এই ঘটনায় জখম হন আরও এক জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিপিএমের দখলে থাকা ঝিলু পঞ্চায়েতের সদস্যদের একাংশ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে তৃণমূলে যোগ দেন। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান ‘পলাতক’। এলাকাবাসীর দাবি, খাতায়-কলমে ব্লক প্রশাসন কাজ চালালেও বস্তুত নানা প্রকল্পের ‘নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের হাতেই। সেই কাজকর্ম কে দেখাশোনা করবে, তা নিয়েই গত বছরখানেক ধরে বারবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেধেছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে নিহতের স্ত্রী বুড়ি বিবি অভিযোগ করেন, বুধবার সকালে কাশেম কাজি ও মনোয়ার কাজির নেতৃত্বে বন্দুক, মাস্কেট, বোমা, পিস্তল নিয়ে কিছু লোক তাঁদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। লাল্টু ও জিয়ার পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি, তার পরে বোমা ছোড়া হয়। তাতেই মৃত্যু হয় লাল্টুর। পুলিশ অবশ্য গুলি চলার কথা মানতে চায়নি।
পুলিশ জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে রাতেই সাইফুল হক, রিয়াজুল হক, আশরাফুল হক, উবাইদুল রহমান, মোতিয়ার রহমান নামে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সাইফুল, রিয়াজুল ও আশরাফুল হক তিন ভাই। মোতিয়ার সম্পর্কে তাঁদের মামা ও উবাইদুল মামাতো ভাই। তাঁদের বাড়ি ন’পাড়ার পাশের গ্রাম সাঁকোনায়। বৃহস্পতিবার ধৃতদের কাটোয়া আদালতে তোলা হয়। প্রথম দু’জনকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে ও অন্য তিন জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। ধৃতদের অবশ্য দাবি, বুধবার সকালে খেতজমিতে কাজ করার সময়ে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছে। ন’পাড়ার তৃণমূল নেতা কাশেম কাজির দাবি, “ধৃতেরা আমাদের দলের কর্মী। আমার অনুগামী হওয়ায় ওঁদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।” পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। |