বর্ষা এসে গিয়েছে। এ বার সাপের উপদ্রব বাড়বে। কিন্তু, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত এভিএস মজুত নেই। সর্পদষ্টদের জন্যই এই ওষুধ প্রয়োজন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এক হাজার এভিএস চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। মিলেছে মাত্র ৫০টি। পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগে রয়েছেন কর্তৃপক্ষও। শুধু তাই নয়, মেডিক্যালে ব্যথা কমানোর আইব্রুফেন, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের মতো ওষুধও মিলছে না। গরিব মানুষকে দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যাল বলেন, “কয়েকটি ওষুধের স্টক শেষ হয়েছে। সমস্যা সমাধানের সব রকম চেষ্টা চলছে।”
কেন এই পরিস্থিতি?
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওষুধের স্টক মাঝেমধ্যেই শেষ হয়। আগে ডিস্ট্রিবিউটরদের জানালে তা মিলত। এ বার সরাসরি কোম্পানি থেকে ওষুধ কিনতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর এমন নির্দেশই দিয়েছে। তাতেই পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “শুধু মেদিনীপুর নয়, অন্য হাসপাতালেও এমন সমস্যা রয়েছে। আগে ডিস্ট্রিবিউটরদের মারফৎ হাসপাতালে ওষুধ আসত। এখন সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ নিতে হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দিয়েছে। সেই মতো কোন কোন ওষুধ প্রয়োজন, তা ই-মেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে জানানো হয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে স্যালাইনেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পর্যাপ্ত স্যালাইন নেই। রোগীর পরিজনদের বাইরে থেকে স্যালাইনও কিনে আনতে হচ্ছে। এর ফলে শুধু রোগীর পরিজনেরা নন, সমস্যায় পড়েছেন চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মী— সকলেই।
সরকারি হাসপাতাল থেকে গোটা তিরিশেক ওষুধ নিখরচায় রোগীদের দেওয়া হয়। এর ফলে গরিব মানুষ উপকৃত হন। কিন্তু, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে বেশ কয়েকটি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ নিতে এসেও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। তপন দাস, লক্ষ্মী ভুঁইয়ারা সেই হতাশের দলেই। তপনবাবু বলেন, “সামান্য অ্যান্টিবায়োটিকও হাসপাতাল থেকে মিলছে না। বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।” লক্ষ্মীদেবীর কথায়, “দোকানে ওষুধের চড়া দাম। খুব সমস্যা হচ্ছে ।”
ঠিক কী কী ওষুধ মেডিক্যালে নেই? জানা গিয়েছে, যে সব ওষুধের স্টক শেষ হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে অ্যামোক্সিলিন (ক্যাপসুল ও সিরাপ), আইব্রুফেন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, বি-কমপ্লেক্স প্রভৃতি। মজুত ওআরএস-ও শেষ। ক’দিন আগে অধ্যক্ষ নিজেই স্টোররুমে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। কোম্পানি থেকে দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা না হলে যে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে, তা মানছেন কর্তৃপক্ষও।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভাল পরিষেবা পাওয়ার আশায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় গ্রামীণ হাসপাতাল থেকেও রোগীদের এখানে স্থানান্তরিত করা হয়। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ আবার পরিস্থিতি দেখে অনেক সময়ে রোগীদের কলকাতায় স্থানান্তর করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালে দিনে গড়ে ১৭০ জন রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় গড়ে দিনে ৮ জনকে। মেডিক্যালে এখন শয্যা-সংখ্যা ৫৬১। কিন্তু ৭০০-রও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ১৫০টি শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। তবে সেই প্রস্তাব এখনও কার্যকর হয়নি। তার উপরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোজ গড়ে ১৭০০ রোগী মেডিক্যালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসেন। তাঁদের অনেকেই এখন বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিস্থিতি দেখে ক’দিন আগে রোগী-কল্যাণ সমিতি-র টাকায় ৪ হাজার স্যালাইন কেনা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ বার কয়েকটি ওষুধও কেনা হতে পারে। |