তিন বছর আগে ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। অথচ চিকিৎসকের অভাবে বেলপাহাড়ির শিমুলপাল অঞ্চলের ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই নতুন ভবনে জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ আজও চালু হয়নি। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যে নতুন সরকারের বর্ষপূর্তির পরও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না-হওয়ায় শিমুলপাল অঞ্চলের ৪৭টি গ্রামের ক্ষুব্ধ কয়েকশো বাসিন্দা সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বেলপাহাড়ি ব্লক-অফিস প্রাঙ্গণে অনশন-অবস্থান শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে শতাধিক মহিলাও ছিলেন। বেলপাহাড়ির যুগ্ম-বিডিও শুভব্রত চক্রবর্তী ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক উত্তম মাণ্ডি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু এলাকাবাসী সাফ জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য দফতরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ বেলপাহাড়িতে এসে উপযুক্ত আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত লাগাতার অনশন-অবস্থান চলবে। বিকেলে ঝাড়গ্রামের সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূপতিনাথ মাঝি বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসে যান। তিনি লিখিত ভাবে আন্দোলনকারীদের প্রতিশ্রুতি দেন আগামী বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসে এসে এলাকাবাসীর সমস্যার কথা শুনবেন। লিখিত-প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অবস্থান ওঠে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবে ওদলচুয়ায় এতদিন শয্যা চালু করা যায়নি। যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করে অন্তর্বিভাগটি চালু করা হবে।” |
তিন বছর ধরে তালাবন্ধ ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। ফাইল চিত্র। |
উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ওদলচুয়ার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ২৪ ঘন্টার জন্য জরুরি বিভাগ ও দশ শয্যা-বিশিষ্ট অন্তর্বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে নতুন ভবন তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় নতুন ভবনটির দরজায় উই ধরেছে ইতিমধ্যে। সামনে আগাছার ঝোপ। ওদলচুয়ার বাসিন্দা পরেশ হেমব্রম, হরিপদ কিস্কু, মঙ্গলি হাঁসদা, কটুচুয়া গ্রামের বৈদ্যনাথ হেমব্রম, পূর্ণাপানি গ্রামের দিনুবালা মাহাতোদের অভিযোগ, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কার্যত কোনও পরিষেবাই মেলে না। পুরনো ভবনের আউটডোরে সপ্তাহে এক-দু’দিন এক জন মাত্র অস্থায়ী চিকিৎসক রোগী দেখেন।” পরেশবাবু, হরিপদবাবু, মঙ্গলিদেবীরা জানান, বর্তমানে এক জন অস্থায়ী চিকিৎসক, এক জন নার্স, দু’জন জেনারেল ডিউটি অ্যাটেনডেন্ট (জিডিএ) থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সংলগ্ন আবাসনে কেবলমাত্র একজন জিডিএ থাকেন। মূলত তিনিই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালান। বাকিরা সপ্তাহে কিংবা দু’সপ্তাহে এক বার এসে ঘুরে যান।
অথচ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া শিমুলপাল অঞ্চলের ৪৭টি গ্রামের প্রায় হাজার দশেক মানুষ ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। চিকিৎসক ও শয্যা না-থাকায় তাঁদের রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয়। ওদলচুয়া থেকে ১৫ কিমি দূরে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল, ৩৭ কিমি দূরে বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। আর ওদলচুয়া থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দূরত্ব ৫৫ কিমি। উচ্চতর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিতে পৌঁছনোর আগেই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু বার প্রশাসনিক মহলে জানিয়েও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনে জরুরি ও অন্তর্বিভাগ চালু করানো যায়নি। বাধ্য হয়েই অনশন-অবস্থানে বসেন তাঁরা। |