ডুয়ার্সের জঙ্গলের খয়েরবাড়ি পার্ক লাগোয়া এলাকায় বেড়ানোর সময়ে এক যুবককে মারধরের পরে আটকে তাঁর হবু স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ৩ টে নাগাদ জলপাইগুড়ির ফালাকাটা থানার আওতায় থাকায় বন দফতরের খয়েরবাড়ি পার্ক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার পরে প্রহৃত যুবকের ফোন পেয়ে তাঁর বাড়ির লোকজন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের এক জনকে বাজার থেকে ধরে ফেলেন। জনতা গণপ্রহারের পরে অভিযুক্ত যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রাতে তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য ফালাকাটা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত আরও ৪ জনের খোঁজে পুলিশ তল্লাশিতে নেমেছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “হবু দম্পতি জঙ্গলের মধ্যে বেড়াতে গেলে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। বিশদে তদন্ত শুরু হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের পরিচয়ও জানা গিয়েছে। শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “নজরদারির গাফিলতি থাকলে কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না। তবে পুরো জঙ্গল সে ভাবে নজর দেওয়া সম্ভব নয়। এর পর যাতে খয়েরবাড়িতে নজরদারি বাড়ানো হয় কর্তাদের সে নির্দেশ দেব। দফতরের কর্তারা সে জন্য কর্মী চাইলে তা দেওয়া হবে।” প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম-এর নেতা যোগেশ বর্মন বলেন, “এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। এই ধরনের ঘটনায় পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। পুলিশের দ্রুত দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করতে হবে। বন দফতরকে নজরদারি বাড়াতে হবে নয়তো পর্যটন শিল্পে আঘাত পড়বে।” পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর বাড়ি ফালাকাটার খগেনহাট এলাকায় খয়েরবাড়ি পার্কের অদূরের দক্ষিণ দেওগাঁ গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক এক যুবকের সঙ্গে দেড় বছর আগ তাঁর ‘মোহর’ হয়। ওই নির্মাণ শ্রমিক কর্মসূত্রে কেরলে থাকেন। বর্ষার পরেই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা। গত শুক্রবার ওই যুবক বাড়ি ফেরেন। ওই যুবক বাড়ি ফেরার পরে তাঁর বাবা পুত্রবধূর জন্য কিনে রাখা সালোয়ার-কামিজের কাপড় দিয়ে তা বানানোর জন্য দর্জি দোকানে যেতে বলেন। এদিন দুপুরে ওই যুবক হবু স্ত্রীকে নিয়ে পার্ক থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে পাঁচ মাইল বাজারে গিয়ে সালোয়ার বানাতে দেন। সেখান থেকে তাঁরা হেঁটে ২ কিলোমিটার দূরের পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। ঝিরঝিরে বৃষ্টি থাকায় দুজনে এক ছাতার নিচে হাঁটছিলেন। প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটার পরে আচমকা ৫ জন যুবক উল্টোদিক থেকে এসে তাঁদের উপরে চড়াও হন। তরুণীটি পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, তাঁকে দুষ্কৃতীরা টানাহেঁচড়া শুরু করলে হবু স্বামী বাধা দিতে যান। তখনই তাঁকে সকলে মিলে মারধর করে গলায় পা দিয়ে, মুখ চেপে রাখে দুষ্কৃতী। এর পরেই দুষ্কৃতীরা পর্যায়ক্রমে তাঁকে ধর্ষণ করে টাকা ও সোনার হার ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। প্রহৃত যুবক বলেন, “দুষ্কৃতীদের দুজনকে আমি চিনতে পারি। ওরা আমাকে শাসিয়ে যায়। কিন্তু, আমি বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিই।” খবর পেয়েই বাইক, সাইকেল নিয়ে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে হাজির হন। দুষ্কৃতীদের দুজনের নাম জানার পরে এলাকার বাজারে তল্লাশি শুরু করে জনতা। তখনই স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী মানিক দাসকে সন্দেহভাজন হিসেবে মারধর শুরু হয়। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে জেরা করে সকলের নামই জানা গিয়েছে। তাঁদের ধরতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। প্রতিদিন ওই পার্কে অনেক দম্পতি বেড়াতে যান। তাঁরা অনেকে ওই নির্জন পথে হাঁটাহাটিও করে থাকেন। তা হলে সেখানে বন দফতর নজরদারি করে না কেন? কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “পার্ক লাগোয়া এলাকায় ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জঙ্গল। সব সময়ে জঙ্গলের সর্বত্র নজরদারি করা সম্ভব হয় না। ভোরে ও সন্ধ্যায় নজরদারি করা হয়। আগামী দিনে নজরদারি বাড়ানোর কথা ভাবা হবে।” ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরার দাবিতে সরব বন দফতরের সাম্মানিক ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী, মিলন দত্ত প্রমুখ তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। মিলনবাবু বলেন, “জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় নজরদারি বাড়ানো জরুরি। যথাস্থানে সব জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।” |