চলতি মাসের শেষের দিকে নাগরিক কনভনশন ডাকতে চলেছে জলপাইগুড়ি পুরসভা। বিষয়, জলপাইগুড়ি শহরকে পুর কর্পোরেশনে উন্নীত করা এবং জলপাইগুড়ি শহরের জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার দাবি। ওই দুটি বিষয়ে শহরবাসীর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচিও নেবে পুরসভা। সোমবার পুরসভার চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কনভেনশন আয়োজনের দুটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি পুরসভার ধারাবাহিক কার্যক্রম হলেও দ্বিতীয় বিষয়টির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর রাজ্যে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কতৃপক্ষ তথা এসজেডিএর বোর্ড পুর্নগঠনে জলপাইগুড়ি শহরের পুরসভার চেয়ারম্যান, বিধায়ক সহ অনান্য জনপ্রতিনিধিরা বাদ পড়েন। সেই সময়েই পুরসভা থেকে জলপাইগুড়ির জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদের দাবি তোলা হয়। তবে নাগরিক কনভেনশনের কথা ভাবা হয়নি। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সহ অনান্য বিষয়ে রাজ্যে জোট সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। সেই প্রেক্ষাপটে এসজেডিএর বাইরে জলপাইগুড়ির জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ চেয়ে জলপাইগুড়ির কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার নাগরিক কনভেনশন তৃণমূল কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, কনভেনশনে শহরের সর্বস্তরের নাগরিকদের উপস্থিত থাকার আর্জি জানানো হবে। উপস্থিত নাগরিকদের কনভেনশনে বলার সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনকেও উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হবে। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ার্ম্যান মোহন বসু বলেন, “কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের যে দাবি শহরবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে করছেন, তা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করতেই কনভেনশন হবে।” ঘোষণা মতো চলতি সপ্তাহ থেকেই শহরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার রুখতে ‘স্পট ফাইন’ শুরু হবে বলে এদিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে। পুরসভা সুত্রের খবর, যে সব ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করবেন তাদের ৫০০ টাকা এবং ক্রেতা বা সাধারন বাসিন্দাদের হাতে ক্যারিব্যাগ থাকলে তাঁর থেকে ৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। ভাগাড়ের জমি নিয়ে তৈরি হওয়া নতুন সমস্যা কাটাতেও পুরসভা কড়া অবস্থান নেবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে গত শুক্রবার পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বলাপাড়ার একটি খাস জমি ভাগাড় তৈরির জন্য পুরসভার হাতে তুলে দিয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমেই পুরসভাকে এই জমি দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। গত শুক্রবার জমি পাওয়ার পরে সেখানে পরিকাঠামো তৈরি করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়েছে পুরসভা। এলাকার জমি চিহ্নিতকরন খুঁটি, ও পুরসভার লাগানো হোর্ডিঙ এলাকার বাসিন্দারা উপড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভায় তবে এদিন পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “প্রথমে পাঙ্গা, তারপরে মন্ডলঘাট এবং এখন বালাপাড়া. যেখানেই প্রশাসন পুরসভাকে ভাগাড় তৈরির জমি দিয়েছে সেখানেই বাধা এসেছে। বালাপাড়া এলাকার জমিটি তুলনামুলক ভাবে জনবিরল। বিষয়টির পেছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। তবে এবার আমরা আর হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই। কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।” সোমবার বালাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা সদর মহকুমা শাসক, বিডিও সহ অনান্য আধিকারিকদের স্মারকলিপি দিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা জয়ন্তী দেবনাথ, কুলেন দেবনাথ, মনিনুল ইসলামরা বলেন, “এলাকায় অনেক জলাভুমি রয়েছে। পাখি আসে। মাছ চাষ হয়। এই জমিতে ভাগাড় তৈরি হলে গোটা এলাকায় দূষণ ছড়াবে। পরিস্থিতি বিষিয়ে উঠতে পারে।” জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” সোমবার শহরের কোনও এলাকা থেকেই জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ হয়নি বলে জানা গিয়েছে। পুরসভার জনস্বাস্থ্য আধিকারিক মহেশ রাজবর বলেন, “শহরের আবর্জনা নিয়ে ফেলার জায়গার অভাবে এদিন ভ্যাট থেকে ময়লা নেওয়া যায়নি।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “জলপাইগুড়ি শহর থকে ময়লা সংগ্রহ করার কাজ থমকে রয়েছে। বর্ষা এসে গিয়েছে। শহর জুড়ে ছড়ানো দূষণ থেকে মড়ক তৈরি হলে তার দায় কে নেবে? বালাপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের যাঁরা ভুল বুঝিয়ে খেপিয়ে তুলছেন, তাঁরা জলপাইগুড়ি শহরবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়বেন।” |