‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটে তাঁদের প্রথম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে সোমবার বিতর্ক এবং জল্পনা উস্কে দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গ ঘোষিত প্রথম নামটি দীপেন মালের। যুব মোর্চার প্রচার সচিব। বর্তমানে মদন তামাং হত্যা মামলায় জেলবন্দি।
দার্জিলিং জিমখানা হলে এ দিন দলীয় বৈঠকের পরে মোর্চা সভাপতির ঘোষণা, “বর্তমানে জেলবন্দি হলেও দীপেন মালে দার্জিলিঙের পোখরিবং-স্যামুং আসন থেকে ভোটে লড়বেন। ভোটে আমজনতা যে রায় দেবেন, তাতেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।” আজ, মঙ্গলবার কালিম্পঙের ডেলোয় জিটিএ-র বাকি ৪৪টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন গুরুঙ্গ।
তামাং হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দীপেনকে ২০১১ সালের ২৫ মে সিবিআই গ্রেফতার করে। জেলবন্দি হলেও বর্তমানে অসুস্থতার কারণে তিনি দার্জিলিং সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
প্রথম প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম কেন ঘোষণা করা হল কেন? মোর্চার অন্দরের খবর, তামাং হত্যা মামলা যে আসন্ন ভোটে মোর্চার বিরুদ্ধে প্রচারে অন্যতম ‘হাতিয়ার’ হিসেবে বিরোধী দলগুলি ব্যবহার করতে পারে, তা নিয়ে মোর্চা নেতাদের অনেকেরই সংশয় নেই। কিন্তু দীপেনকে প্রার্থী করে জনতার রায় নিলে একাধিক ‘রাজনৈতিক সুবিধা’ মিলবে বলেও তাঁরা মনে করেন। ওই নেতাদের ধারণা, প্রথমত, দীপেনকে প্রার্থী করায় দল যে দুর্দিনেও পাশে থাকে, সেই বার্তা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আরও জোরালো ভাবে দেওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, তামাং হত্যা মামলায় ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু নেতার নাম জড়ানো হয়েছে’ এই অভিযোগকে সামনে রেখে মোর্চা প্রচারে যেতে পারবে।
মোর্চার প্রার্থী হিসেবে দীপেন মালের নাম ঘোষণা হওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ এবং সিপিআরএম। গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “পাহাড়ে যেন নাটক চলছে! না হলে মদন তামাং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দীপেন মালেকে পুরস্কৃত করা হয়। এটা সাধারণ মানুষ মেনে নেবেন না।” সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী বলেন, “এটা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। রাজ্য সরকারের এর বিরুদ্ধে কিছু বলা উচিত।” পাশাপাশি, খুনের মামলায় অভিযুক্তকে প্রার্থী করে মোর্চা বিরোধীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে চাইছে কি না সেই প্রশ্নও তুলেছেন গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, জিএনএলএফ নেতাদের একাংশ।
গুরুঙ্গ অবশ্য দাবি করেছেন, “অন্য কোনও ব্যাপার নেই। আমরা মনে করি, দীপেন মালে নিরপরাধ। তাঁকে ফাসানো হয়েছে। আমরা তাঁর পাশে রয়েছি। সে জন্যই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে জোট গড়ে জিটিএ ভোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই গোর্খা লিগ, সিপিআরএম কয়েক দফায় বৈঠক করেছে। কাল, বুধবার ফের আলোচনায় বসবে দু’টি দল। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে তারা। এ দিন থেকে জিটিএ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন কোনও দলই মনোনয়নপত্র তোলেনি। জিটিএ নির্বাচনের সময় পাহাড়ের আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখার ব্যাপারে এ দিন কলকাতায় রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসনের বৈঠক হয়। |