ভরা আষাঢ়েও বৃষ্টিহীন তুঘলকি চলবে বর্ষার
খনও দিনের আকাশ কালো হয়ে অকাল-সন্ধ্যা। কখনও বা নীল আকাশ জুড়ে পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ। সূর্যের তাপ ঠিকরে এসে লাগছে গায়ে। কখনও একটু একটু ভেজা হাওয়া। কখনও গাছের পাতাই নড়ছে না। কোথাও কোথাও মিনিট পাঁচেকের বৃষ্টি। কোথাও বা শুধুই ঘেমো অস্বস্তি।
অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলানো হয়তো মুশকিল। কিন্তু বৃষ্টি হোক বা না-হোক, দক্ষিণবঙ্গে এটাই এখন বর্ষা!
জুন গিয়ে জুলাই হাজির। ঋতুচক্রের প্রচলিত বিন্যাস অনুযায়ী বর্ষার ভরা আষাঢ়। কিন্তু চলতি মরসুমে এ-পর্যন্ত কলকাতার ভাগ্যে ‘রেনি ডে’ জুটেছে মাত্র একটি। গোটা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি-ঘাটতির রেখচিত্র বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। রথ গেল, উল্টোরথও। আবহাওয়া দফতরের ভাষায় এখন ঘোর বর্ষা। কিন্তু বৃষ্টিহীন ‘বর্ষা’। নাকাল মানুষ। বিপন্ন চাষ-আবাদ।
আবহবিদেরা বলছেন, মৌসুমি বায়ু এক ধরনের বায়ুপ্রবাহ। ওই বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হলে ঘনঘন বৃষ্টি হয়। আর সেই বায়ুপ্রবাহ যখন নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন বৃষ্টি হয় না। মৌসুমি বায়ুর উপস্থিতিতেই যে সব সময় বৃষ্টি হবে, তা-ও কিন্তু নয়। বৃষ্টির জন্য দরকার ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপের মতো অনুঘটকেরও। যেমন, বঙ্গোপসাগরে এই মুহূর্তে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। তার জন্য কিছুটা পরিবর্তনও ঘটেছে আবহাওয়ার।
ছিটেফোঁটা যেটুকু পড়ে, তাতেই আনন্দ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
আকাশে মাঝেমধ্যেই চলে আসছে ঘন কালো মেঘ। তা থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু যাকে বলে ধারাবর্ষণ, তার দেখা নেই। ঘূর্ণাবর্তটি পুরোপুরি তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনা চলবে বলে আবহবিদেরা জানিয়ে দিয়েছেন।
ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য কি প্রসন্ন হতে পারে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, সোমবার বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তটি যেখানে এবং যে-অবস্থায় রয়েছে, তাতে ওড়িশার লাভবান হওয়ার কথা। কারণ, ঘূর্ণাবর্তটির অভিমুখ ঘুরে যাচ্ছে ওড়িশার দিকে। ওই ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি সঞ্চয় করে স্থলভূমির দিকে যত এগোবে, ততই বৃষ্টি বাড়বে ওড়িশায়। মাঝেমধ্যে আকাশ কালো করে আসা মেঘ আর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে দক্ষিণবঙ্গকে।
গাঙ্গেয় বঙ্গের কি তা হলে কোনও আশাই নেই?
গোকুলবাবুর আশ্বাস, ওই ঘূণাবর্ত যদি স্থলভূমিতে ঢুকে পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোয়, সে-ক্ষেত্রে এখানেও ভাল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সপ্তাহের শেষাশেষি সেই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁদের মন্তব্য, কবে বৃষ্টি হবে, কত বৃষ্টি হবে, কোথায় কোথায় বৃষ্টি হবে, তার পুরোটাই নির্ভর করছে ঘূর্ণাবর্তটির মতিগতির উপরে। তবে ঘূর্ণাবর্তটি যে আর নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে না। তার ইঙ্গিত স্পষ্ট বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি ঘূর্ণাবর্তই বর্ষাকে টেনে এনেছিল দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু সেই ঘূর্ণাবর্তটিও শেষ পর্যন্ত আর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারেনি। তাই বৃষ্টির উপরে জারি হয়েছে প্রকৃতির অকাল স্থগিতাদেশ!
বর্ষার উদাসীনতায় দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি-ঘাটতি ছিল ৪০ শতাংশ। এ সপ্তাহের শুরুতে তা বেড়ে হয়েছে ৪৫ শতাংশ। ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে যা বৃষ্টি হবে, তাতে এই ঘাটতি মিটবে না বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। বৃষ্টির ঘাটতিতে বীজতলায় ধানের চারা বাড়তে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে তা শুকিয়ে গিয়েছে বলে মহাকরণের কৃষি দফতর সূত্রের খবর। কোথায় বীজধানের কী অবস্থা, সেই ব্যাপারে জেলাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে কৃষি দফতরের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.