ছুটির দিনে জন্মদিন পালনে রাজি নয় সরকার পক্ষ। কিন্তু বিরোধী বামফ্রন্ট এ বার ছুটির দিনে বিধানসভায় রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালনের কর্মসূচি নিল। যার ফলে আগামী রবিবারের ওই কর্মসূচি ঘিরে ফের শাসক-বিরোধী ‘সংঘাতে’র আবহ তৈরি হচ্ছে। জ্যোতিবাবুর জন্মদিন ৮ জুলাই এ বার রবিবার পড়েছে। ঠিক যেমন আরও এক প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন ১ জুলাই পড়েছিল রবিবার। ছুটির দিন ছিল বলে বিধানসভায় বিধানচন্দ্রের স্মরণ-অনুষ্ঠান করা হয়েছিল নির্ধারিত তারিখের দু’দিন আগেই, ২৯ জুন। সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, জ্যোতিবাবুর জন্মদিনও তাঁরা পালন করবেন। সেই দিনই বিরোধী বামফ্রন্টের তরফে পাল্টা জানিয়ে দেওয়া হয়, বিধানচন্দ্রের মতো জ্যোতিবাবুর জন্মদিনও আগে পালন করলে তারা সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। তার পরেই বাম পরিষদীয় দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী রবিবার ৮ তারিখেই বিধানসভায় তারা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন করবে। তার জন্য বাম বিধায়কদের ওই দিন সাড়ে ১১টায় বিধানসভা ভবনে উপস্থিত হতেও বলা হয়েছে। বাম সূত্রের বক্তব্য, জন্মদিন পালন ঘিরে সরকারের মনোভাবের কাছে ‘নতিস্বীকার’ না-করার বার্তা দিতেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বিধানসভার সরকারি অনুষ্ঠান যে ৮ তারিখ হবে না, তা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোমবার বলেছেন, “জন্মদিন রবিবার পড়লে আমরা সাধারণত অন্য দিন পালন করি। এই ক্ষেত্রেও কবে করা হবে, এখনও ঠিক হয়নি। যে দিন হবে, সেটাই সরকারি অনুষ্ঠান।” গত রবিবার বিধানচন্দ্রের জন্মদিনে কেউ চাইলে যাঁতে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, তার জন্য কর্মীদের বিধানসভা খুলে রাখার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জ্যোতিবাবুর জন্মদিনের ক্ষেত্রেওতা-ই করা হতে পারে। তবে স্পিকারের মতে, “সরকারি অনুষ্ঠান যে দিন হবে, সেই দিনই সব বিধায়কের উপস্থিতি কাম্য। ৮ তারিখেই শ্রদ্ধা জানাতে হলে বামফ্রন্ট বিধায়কদের জন্য তো আরও অনেক জায়গা আছে!” এখন দেখার, শেষপর্যন্ত স্পিকার বিরোধীদের রবিবার জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেন কি না।
বাম-জমানায় হাসিম আব্দুল হালিম স্পিকার থাকার সময়েই জ্যোতিবাবুর মৃত্যুর পর বিধানসভায় তাঁর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। প্রথম বছর জ্যোতিবাবুর প্রতিকৃতি স্থাপন করে তাঁর নামে স্মারক বক্তৃতারও আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বক্তা ছিলেন প্রয়াত বসুর ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ এবং লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
দল হিসাবে সিপিএম মুজফ্ফর আহমেদ ছাড়া কারও জন্মদিন পালন করে না। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পরিষদীয় স্তরে জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনে কোনও বাধা নেই বলেই সিপিএম সূত্রের বক্তব্য। দলের এক বিধায়কের কথায়, “সরকার কী করবে, জানি না। আমরা নির্দিষ্ট দিনেই সমবেত হয়ে ওঁর জন্মদিন পালন
করতে চাই।” |