দুই মন্ত্রীকে নিয়ে বিধানসভায় ‘বিড়ম্বনা’য় পড়তে হল সরকারকে।
এক মন্ত্রী এলেন দেরিতে। এবং প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের নাম ভুল বলে বসলেন! অন্য মন্ত্রীও দেরিতে এলেন। এবং প্রশ্ন গুলিয়ে ফেলে ভুল উত্তর পড়তে শুরু করলেন! সোমবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে পর পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং দমকল মন্ত্রী জাভেদ খানের ‘ভুল’ নিয়ে কিঞ্চিৎ ‘অস্বস্তি’তে পড়তে হল সরকার পক্ষকে।
এ দিনের অধিবেশনের শুরুতেই প্রশ্নোত্তর পর্বে
প্রথম প্রশ্নেরই জবাব দেওয়ার কথা ছিল শিক্ষামন্ত্রীর। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রশ্ন করার পর দেখা যায়, শিক্ষামন্ত্রী তখনও সভায় আসেননি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্নটিকে ‘হোল্ড’ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দেখা যায় পরের প্রশ্নকর্তা তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময়
করও আসেননি। ফলে তৃতীয় প্রশ্ন শুরু করতে বলেন স্পিকার। কিন্তু প্রশ্নকর্তা থাকলেও উত্তরদাতা দমকল মন্ত্রীর আসন তখনও শূন্য। ফলে পরবর্তী প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে।
এর মধ্যে ব্রাত্য সভায় এলে স্পিকার তাঁকে বলেন, “সময় মতো সভায় আসবেন। আপনি না-আসায় প্রশ্ন হোল্ড করতে হয়েছে।” মুর্শিদাবাদে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির কাজ কী পর্যায়ে রয়েছে, সূর্যবাবুর সেই প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, “কয়েক মাস আগে কাজ শুরু হলেও স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক বিরোধিতায় কাজ বন্ধ রয়েছে। কৃষি ও বাস্তুভূমি রক্ষার্থে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বিরোধী সমম্বয় সমিতি ও ভারতীয় জনতা দল বাধা দিচ্ছে। দ্রুত কাজ শুরু করতে প্রশাসনিক স্তরে কথা বলেছি। তবে কবে কাজ শুরু হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে সরকারের পক্ষে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।” এর পরেই সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “দলটার নাম ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি। আপনি তো ভারতীয়
জনতা দল বললেন!” ভুল বুঝে আর কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু। পরে সভার বাইরেও সূর্যবাবু বলেন, “কতজন বিজেপি সদস্য আছেন ওখানে? যাদের একজনও বিধায়ক নেই, তাদেরও ভয় পাচ্ছে নাকি সরকার?” ব্রাত্যর কাছে সভায় সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লা জানতে চান, বাধা সরাতে প্রয়োজনে সরকার উচ্ছেদ
কেন করছে না? বিষয়টি সরকারের ‘বিবেচনাধীন’ বলে ব্রাত্য জানান।
ব্রাত্যর জবাবের মধ্যেই সভায় ঢোকেন জাভেদ। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর পর দমকল মন্ত্রী জাভেদ জবাব দিতে উঠে যা বলতে থাকেন, তার সঙ্গে প্রশ্ন তালিকার প্রশ্নের কোনও মিল পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী ‘ভুল’ উত্তর দিচ্ছেন বলে প্রশ্নকর্তা ফরওয়ার্ড ব্লকের তাজমুল হোসেন স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভুল হচ্ছে বুঝে মন্ত্রীর পাশে দ্রুত চলে আসেন সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রীকে উত্তর-নথি দেখতে সাহায্যও করেন তাঁরা। কিন্তু মন্ত্রী বলে ফেলেন, “ওই প্রশ্নের জবাব দফতর থেকে এখনও আসেনি।” শুনেই বিরোধীরা লিখিত জবাবের কাগজ দেখিয়ে বলতে থাকেন, “উত্তর তো এসে গিয়েছে!” পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকার বলেন, “মন্ত্রী বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। উনি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন।” শেষমেশ ফাইল ঘেঁটে জাভেদ অবশ্য প্রশ্নের যথাযথ উত্তরই দেন। প্রশ্ন ছিল, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত রাজ্যে কতগুলি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে? মন্ত্রী জানান, ৩২১টি। জেলাওয়াড়ি অগ্নিকাণ্ডের তথ্যও মন্ত্রী সভায় দেন। |