‘বদলে’ যাওয়া মমতার হাতিয়ার এখন ফেসবুক
মতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কিছুটা বদলে গিয়েছেন?
অনেকেই মনে করছেন, মমতা এখন আগের তুলনায় কম কথা বলছেন। অন্তত প্রকাশ্যে। শুধু বামেরাই নন, বিভিন্ন মহলে এই নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যে সিঙ্গুর-রায় থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক একাধিক বিষয়ে তুমুল আলোচনা চলছেই। কিন্তু তার মোকাবিলায় বরাবরের ‘বাগ্মী’ মমতা অনুপস্থিত! বরং সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে এক নতুন হাতিয়ার কাজে লাগাচ্ছেন তিনি ফেসবুক।
কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটটির বিরুদ্ধে একাধিক বার সরব হয়েছেন মমতা এবং তাঁর দলের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল এবং মমতা-বিরোধী মঞ্চ হিসেবেই মূলত এটাকে কাজে লাগাচ্ছে সিপিএম। এ বার কিন্তু মমতা নিজেই জনগণের সামনে দলের অবস্থান তুলে ধরতে ফেসবুককে কাজে লাগাচ্ছেন। আর এটা করতে গিয়ে এক সঙ্গে তিনটি কাজ সেরে ফেলেছেন তিনি। এক দিকে ফেসবুকের হাত ধরে নতুন
—নিজস্ব চিত্র
প্রজন্মের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন। নানা বিষয়ে দলের নেতাদের মন্তব্য ঘিরে অবাঞ্ছিত বিতর্কও অনেকটা আটকাতে পেরেছেন তিনি। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত এক বছরে, বিশেষত সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে বারেবারে যে বিতর্ক বেধেছে (পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ থেকে কৃষক আত্মহত্যা বা মনীষীদের জন্মদিন), তা-ও অনেকটা সামাল দিতে পেরেছেন তিনি। এক কথায় ফেসবুক-এ মুখ খুলে নিজেও অনেকটাই বাক্সংযম মেনে চলছেন! দলীয় নেতাদের প্রতিও মমতার স্পষ্ট নির্দেশ, বিরোধী প্রচার রুখতে যত্রতত্র মন্তব্য না করাই ভাল। রাজ্যের শিল্প সংক্রান্ত ভাবমূর্তি তৈরি করা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়, এমনকী নতুন প্রজন্মের কাছে সামাজিক ভাবে পৌঁছনো এই সব কিছুই করা হবে ফেসবুকের মাধ্যমে। এবং সেটি করবেন তিনি নিজেই।
মমতা সতর্ক থাকতে চাইছেন যে, বিনিয়োগ এবং শিল্প পরিকাঠামো গড়ার প্রশ্নে কোনও রকম নেতিবাচক ভাবমূর্তি যাতে স্থায়ী ভাবে তৈরি না হয়। সে কারণেই বিভিন্ন বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ফেসবুকে ‘পোস্ট’ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক হল মমতা তাঁর ফেসবুক পেজটি চালু করেছেন। এরই মধ্যে সেটি দেখেছেন ৮৫,১৪৪ জন! ভেবে, বাছাই করা শব্দ ব্যবহার করে এই পোস্টগুলি লেখা হচ্ছে। দলের এক নেতার কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পেজটিই ভবিষ্যতে আমাদের দলীয় নথি হয়ে উঠবে।”
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নেতাদের ফেসবুক ব্যবহারের রীতি বেশ কিছু দিন ধরেই চালু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট প্রবল জনপ্রিয়। ভারতীয় রাজনীতিকরাও জোর দিচ্ছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার দিকে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের টুইটারে ‘ফলোয়ারের’ সংখ্যা বিশাল। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও প্রায়ই দেখা যায় ‘পাম-টপ’ নিয়ে ফেসবুকে মেসেজ করায় ব্যস্ত থাকতে। রাহুল গাঁধীর ফেসবুক-জনপ্রিয়তাও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন বা মানব মুখোপাধ্যায়ের মতো নেতারা ফেসবুকে অভ্যস্ত হলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কোনও দিন এ সবের ধার ধারেননি।
তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়ান প্রথম থেকেই ‘টেক স্যাভি’। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন, টুইটারের মাধ্যমে ফলোয়ারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। এমনকী রেলের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে থাকার সময় চলন্ত ট্রেনে যাতে নেট পরিষেবার সুযোগ নিতে পারেন যাত্রীরা, সে বিষয়েও সক্রিয় হয়েছিলেন ডেরেক। মমতার ফেসবুক পরিকল্পনার পিছনেও রয়েছেন তিনিই। মমতার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট এর সাম্প্রতিক বিষয়বস্তু কী, তা পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার মিনিট দশেক আগে টুইটারের মাধ্যমে জানিয়ে দেন ডেরেক।
মমতা নিজে ফেসবুক-এর ‘সাফল্যে’ খুশি। তাঁর কথায়, “এত অল্প সময়ের মধ্যে এই অসাধারণ সাড়া পেয়ে আমি অভিভূত।...আশা করি এক সুরে গলা মিলিয়ে মানুষের সমস্যাগুলির সমাধানে পরবর্তী ধাপে পৌঁছনো যাবে।” ফেসবুক যাঁরা ব্যবহার করেন, তাদের সিংহভাগই যে অল্পবয়সী, এই বিষয়টিও নজরে রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “সমস্ত ভারতীয় নাগরিক, বিশেষত দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একজোট হতে।”
নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছনোর জন্য শুধু রাজনৈতিক বার্তার মধ্যেই নিজেকে সীমায়িত রাখছেন না মমতা। সম্প্রতি রাহুল দেব বর্মনের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি পোস্ট করেছেন তিনি। লিখেছেন, “রাহুল দেব বর্মনের গান এবং সুর অমর। নতুন প্রজন্মের কাছে যা অনুপ্রেরণা স্বরূপ।” এক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারের কাছাকাছি কমেন্ট পড়েছে তাঁর এই পোস্টে, যাদের বেশির ভাগই অল্পবয়সী। এদেরই একজন সন্মিত সরকার। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের এই ছাত্রটি লিখেছেন, ‘মা মাটি মানুষ মিটস মিউজিক!’
ফেসবুকে তিনি যা লিখছেন, তার বাইরে কোনও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট প্যানেলও তৈরি করে দিয়েছেন নেত্রী। স্থির হয়েছে, দিল্লিতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়ান এবং কুনাল ঘোষ এবং কলকাতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রয়োজন অনুসারে দলীয় অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন।
মমতার পরিকল্পনা রয়েছে, ফেসবুক-এর মাধ্যমে সরকারের ভবিষ্যৎ শিল্পনীতির ছবিটি তুলে ধরা। বিনিয়োগ নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে শিল্পমহলের কাছে বার্তাও দিতে চান তিনি। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, শিল্প নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনও কারণই নেই। তাঁর কথায়, “গত এক বছরের সময়সীমায় ১৭৬টি সংস্থার পক্ষ থেকে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে এখনও পর্যন্ত। সেগুলি রূপায়িত হলে আনুমানিক ৩ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা।” বোলপুর, কল্যাণী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় হার্ডওয়্যার পার্ক, দার্জিলিং জেলায় আইটি হাব ইত্যাদির কাজ অদূর ভবিষ্যতেই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়গুলো ভবিষ্যতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্ট-এ কী ভাবে উঠে আসে, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.