‘শৃঙ্খলার’ দাবি মমতার
‘বিদ্রোহিণী’ শিখার কাছে জবাবদিহি চাইবে তৃণমূল
গামী শুক্রবারের মধ্যেই তৃণমূলের ‘বিদ্রোহিনী’ বিধায়ক শিখা মিত্রকে ডেকে পাঠাবে দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না-করে তোপ দেগেছিলেন দলীয় সাংসদ সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখাদেবী। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট যায় তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবারই কমিটির চেয়ারম্যান তথা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ সুব্রত বক্সি এবং কমিটির দুই সদস্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। শিখাদেবী কমিটির কাছে কী বলেন, তা শোনার পরই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য।
শিখখাদেবীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আগে উনি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে আসুন। কথা বলুন। তারপর তো শাস্তি!” রবিবারই পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, শিখা দেবীর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবেই।
এ দিনই ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ২১ জুলাই শহিদ দিবসের কর্মসূচি নিয়ে দলের সমস্ত বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলর-সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। জল্পনা ছিল, ওই সভাতেই শিখাদেবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তেমনকিছু হয়নি। শিখা-সোমেন সভায় আসেননি। সভায় মমতা থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থবাবু প্রমুখ তাঁদের বক্তৃতায় দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উপর গুরুত্ব দেন। কিন্তু কেউ শিখাদেবীর নাম করেননি। বস্তুত, মমতার বক্তব্য শুনে দলের নেতারা মনে করেছেন, তিনি বিষয়টিকে ‘উপেক্ষা’ই করছেন। সভায় মমতা বলেছেন, দু’একজন কী বলল, না-বলল তাতে কিছু যায় আসে না। তৃণমূলের ১০০ শতাংশ শৃঙ্খলা আছে। আর পার্থবাবু বলেছেন, দলীয় কর্মীদের শৃঙ্খলাই তৃণমূলের সম্পদ।
দলের নেতাদের একাংশের মতে, এ দিনের মঞ্চে শিখাদেবীর নাম করে কিছু বললে, বিশেষত মমতা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালে শিখাদেবীকে ‘অতিরিক্ত গুরুত্ব’ দিয়ে দেওয়া হত। দলীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে দেখাতে চেয়েছেন, বিষয়টিকে তাঁরা ‘উপেক্ষা’ই করছেন। দলের অন্য অংশের মতে, যাদবপুরের সাংসদ কবীর সুমন দলীয় নেতৃত্বের একাংশের কড়া সমালোচনা করলেও, সরাসরি মমতাকে লক্ষ্য করে এমন ভাষায় ‘কটাক্ষ’ করেননি। কিন্তু শিখাদেবী নাম-না করে মমতার বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার ‘যোগ্যতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে দল যে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেবেই, তা নিশ্চিত। তবে তাঁকে বহিষ্কার করলে তিনি ‘দলহীন’ বিধায়ক থেকে যেতে পারেন। কিন্তু তাঁকে সাসপেন্ড করে বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে দলীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থা নিতে বললে শিখাদেবী বিধায়ক হিসাবে কাজ করতে পারবেন না। এখন দলীয় নেতৃত্ব কী করবেন, তা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
এ দিন অবশ্য শিখাদেবীর বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। তবে সোমেনবাবু রাতে বলেন, “আমাদের কিছু বলার নেই।” ঘটনাচক্রে, এ দিন বিধান ভবনে একদল কংগ্রেসকর্মী প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক রাকেশ সিংহের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান। পরে রাকেশ বলেন, “সোমেনবাবুর স্ত্রী শিখাদেবী বিধান রায়ের জন্মদিন পালনের নামে যে ভাবে কংগ্রেস দফতরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করছেন, আমরা তার প্রতিবাদ করি। ওঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। এখন আবার কংগ্রেসে ঢোকার চেষ্টা করছেন।”
এই পরিস্থিতিতে দলে শৃঙ্খলারক্ষার প্রশ্নে তিনি যে ‘কড়া মনোভাব’ নিয়েছেন, তা মমতা এ দিনের সভায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। কাউন্সিলর থেকে বিধায়কদের ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে বলেছেন, তাঁরা যেন ‘জনমুখী (প্রো-পিপ্ল) রাজনীতি করেন। নিজের জন্য যেন রাজনীতি না-করেন। দলের একাংশের মতে, নেত্রী সিন্ডিকেট এবং প্রমোটারদের সঙ্গে ‘আঁতাঁত’ নিয়ে বলতে চেয়েছেন। এলাকায় উন্নয়নের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির আওতায় আরও জনগোষ্ঠীকে অর্ন্তর্ভুক্ত করার বিল আনার কাজে ‘বিলম্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিষয়টি জানতে চান। তারপর সভায় উপস্থিত রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে বিলটি অবিলম্বে বিধানসভায় পেশ করার নির্দেশ দেন। সে জন্য প্রয়োজনে বিধানসভার অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, বিলটি নিয়ে আলোচনায় তিনি নিজে অংশ নিতে চান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.