সেস থেকে অর্থসঙ্কট
রাজ্যের সমস্যা মেটাতে দিল্লিতে সক্রিয় রাজ্যপাল
ক দিকে পাহাড় পরিস্থিতি, অন্য দিকে আর্থিক সাহায্য এবং কয়লার রয়্যালটি দাবি আজ সারা দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে দিল্লিতে দরবার করলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কয়লামন্ত্রীর সঙ্গে আজ তাঁর বৈঠক হয়েছে। কাল তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গেও কাল ফের এক দফা বৈঠক হবে রাজ্যপালের।
সিঙ্গুরের জমি ফেরত সংক্রান্ত বিল নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতভেদ দেখা দিয়েছিল। বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য না পাঠানো নিয়ে তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের কী আলোচনা হয়েছিল, তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন নারায়ণন। এতে রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই মতভেদ পিছনে ফেলে আজ রাজ্যের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন রাজ্যপাল।
যেমন পাহাড় সমস্যা। দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) গঠন হলে সেখানে রাজ্যপালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। গোড়ায় টালবাহানা করলেও বিমল গুরুঙ্গরা শেষ পর্যন্ত জিটিএ-র ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তরাই-ডুয়ার্সের মৌজাগুলিকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এ বিষয়ে রাজ্যপালের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র। আজ চিদম্বরমের সঙ্গে পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সময়াভাবে আলোচনা শেষ না হওয়ায় আগামিকাল সকালে ফের তাঁরা বৈঠক করবেন বলে ঠিক হয়েছে। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল বলেন, “পাহাড়ে রাজ্য সরকার খুব ভাল কাজ করেছে।”
কয়লার রয়্যালটি সংক্রান্ত রাজ্যের দীর্ঘদিনের দাবি নিয়েও আজ কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন নারায়ণন। এই বৈঠক একটু অভিনব এই অর্থে যে, রাজ্যপাল সাধারণত প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই বৈঠক করেন। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, কয়লার রয়্যালটির বিষয়টি রাজ্যের আর্থিক সমস্যার সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্র সম্প্রতি কয়লার রয়্যালটির হার বাড়িয়েছে। এর ফলে অন্যান্য কয়লা উৎপাদনকারী রাজ্য লাভবান হলেও পশ্চিমবঙ্গ এক পয়সা বাড়তি পাবে না। রাজ্যকে ১৯৮৭ সাল থেকে চলে আসা হারেই রয়্যালটি দেওয়া হবে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ নিজের এলাকায় উৎপাদিত কয়লা থেকে ২৫% সেস আদায় করে। কিন্তু বাম আমল থেকেই এই ব্যবস্থায় আপত্তি জানিয়ে আসছে রাজ্য। মমতা সরকারেরও যুক্তি, রাজ্যের কোষাগারের দুরবস্থার কথা ভেবে রাজ্যকে সেস ও রয়্যালটি দু’টোই আদায় করতে দেওয়া হোক। কিন্তু এর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রের। রাজ্য আবার তা মানতে রাজি নয়।
একই ভাবে রাজ্যের কয়লা খনিগুলি নিলাম করার বদলে তাদের মতামত নিয়ে বণ্টন করার দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের যুক্তি, সরকারের হাতে খনি থাকলে রাজ্যে যাঁরা নতুন শিল্প গড়তে আসছেন, তাঁদের প্রয়োজনমতো কয়লার জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। নিলাম হলে রাজ্যের কয়লা বাইরে চলে যেতে পারে। ২০০৭ সালের পর রাজ্য সরকার নতুন কোনও কয়লাখনি পায়নি। রাজ্যের প্রাপ্য ন’টি খনি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আগেই আবেদন করা হয়েছে। এই খনিগুলি রাজ্যের বিদ্যুৎ ও ইস্পাত শিল্পের জন্য জরুরি বলেই মমতা সরকারের যুক্তি। সরকারি সূত্রের খবর, আজ গোটা বিষয়টি নিয়ে কয়লামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন নারায়ণন। রাজ্য সরকারের মতো রাজ্যপালও মনে করছেন, আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবে পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত কেন্দ্রের। কয়লার রয়্যালটির বিষয়টিও সেই ভাবে দেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানাবেন বলেও আজ জানিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত, প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন এ বিষয়ে তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন নারায়ণন। প্রণববাবু সেই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। এ বিষয়ে প্রণব-মনমোহন বৈঠকও হয়।
আজ কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, তিনি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের জন্য কোনও আর্থিক প্যাকেজ চাননি। যা চেয়েছেন, তা হল ঋ ণের আসল ও সুদ মকুবের উপর তিন বছরের স্থগিতাদেশ। বস্তুত, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুকে প্রার্থী করার যে বিরোধিতা তৃণমূল করছে, এই স্থগিতাদেশ না পাওয়াই তার মূল কারণ বলে অনেকের মত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.