ভাড়া বৃদ্ধির দাবি ফের নাকচ মন্ত্রীর
বাস নিয়ে রাজ্যই চালাক, বললেন মালিকেরা
কিছু দিন আগেও ব্যারাকপুর থেকে কলকাতায় আসতে হলে চারটে রুটের বাস মিলত। ৭৮, ৭৮এ, ৭৮বি, ৭৮সি। গত দু’-তিন বছরে তিনটেই উঠে গিয়েছে। টিকে আছে শুধু ৭৮ নম্বর। তা-ও টিমটিম করে। এটাও যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মালিকদের দাবি।
এ হল উত্তর ২৪ পরগনায় যাত্রী পরিবহণের একটা ছবি। দক্ষিণের পরিস্থিতিও তথৈবচ। যেমন, বছরখানেক ইস্তক অফিসটাইমটুকু বাদ দিয়ে ২১৮-ও বাবুঘাট থেকে বারুইপুর যাচ্ছে না। গড়িয়ার পরে মহামায়াতলা পর্যন্ত গিয়ে থেমে যাচ্ছে।
একই ভাবে কলকাতা ও শহরতলিতে বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ও যাত্রাপথ ছাঁটাই হয়েছে। ভাড়া না-বাড়ালে বহু মালিক বাস নামাতে চাইছেন না। অথচ বাসভাড়া বৃদ্ধিতে রাজ্যের সায় নেই। সোমবারও বেসরকারি বাস-মালিকদের দু’টি সংগঠনের নেতারা পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এবং যথারীতি এ দিনও মন্ত্রী তা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। মালিকেরা পাল্টা জানিয়ে এসেছেন, ভাড়া না-বাড়ালে বেসরকারি বাস সরকার নিজের হেফাজতে নিয়ে নিক। তাঁদের পক্ষে আর লোকসানে বাস চালানো সম্ভব নয়।
অর্থাৎ আমজনতার ভোগান্তি অবসানের লক্ষণ তো নেই-ই, বরং তা আরও বাড়ার আশঙ্কা।
রাজ্য সরকার গণ-পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির পক্ষপাতী নয়। দুধ থেকে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য থেকে পরিবহণ সর্বত্র এই নীতি আঁকড়ে থাকার খেসারতও দিতে হয়েছে। লোকসানের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে সরকারি দুধ-বিদ্যুৎ-পরিবহণ সংস্থাগুলো। বাধ্য হয়ে দুধ ও বিদ্যুতে ঘুরপথে দাম বাড়ানোর পথে হেঁটেছে সরকার। এমনকী, ট্যাক্সি-মালিকদের ক্ষোভ কমাতে ট্যাক্সির নৈশ-ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাসের ভাড়া বাড়েনি।
ফলে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলো যেমন দিন দিন মুমূর্ষু হয়ে পড়ছে, তেমন বেসরকারি বাসও উঠে যাওয়ার জোগাড়। যে রুটে গড়ে ৭০-৭৫টি বাস চলত, সেখানে এখন চলে বড়জোর ৪০-৪৫টি। আগে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একটা বাস মাসে হয়তো ২৬ দিন চলত। এখন চলে সাকুল্যে ২০ দিন। মালিকদের দাবি, এমন চলতে থাকলে আগামী দু’-এক বছরের মধ্যে কলকাতায় বেসরকারি বাস বলেই আর কিছু থাকবে না। “ক্ষতি হলে সরকার ভর্তুকিতে বাস চালাতে পারে। আমরা তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে পারব না।” বলছেন তাঁরা। কেন?
মালিকদের যুক্তি, তাঁদের খরচায় পোষাচ্ছে না। ওঁদের হিসেবে, শেষ বার ভাড়া বেড়েছিল ২০০৯-এর অগস্টে। তখন ডিজেল ছিল ৩৫ টাকা ৩ পয়সা। এখন ৪৩ টাকা ৭৪ পয়সা। পাশাপাশি ইঞ্জিন অয়েল থেকে শুরু করে যাবতীয় যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। অথচ ভাড়া বাড়েনি। লাভ না-বাড়ায় কন্ডাক্টর-চালকদের রুজিও বাড়ছে না। ওঁঁদের অনেকে ‘অন্য পেশা’য় চলে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাস চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে।
কিন্তু তাই বলে কি বাসের চাহিদা নেই?
বরং উল্টোটা। মহাকরণের একাধিক কর্তার কথায়, “গত ক’মাসে মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিত্যযাত্রীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, বাস নেই।” সরকারি-সূত্রের খবর, গণ-হয়রানির এমন বেশ কিছু অভিযোগ পেয়ে পরিবহণ দফতর নড়েচড়ে বসেছে। বেসরকারি সব রুটে কতগুলো বাস থাকার কথা এবং কতগুলো রয়েছে, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। যদিও তাতে খুব একটা আশার আলো দেখছেন না কর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের মন্তব্য, “আসল তো ভাড়া বাড়ানো। সেটা হবে না। অতএব সুরাহাও হওয়া মুশকিল।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য এ দিনও বলেন, “কোনও অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের অসুবিধে করে ভাড়া বাড়ানো যাবে না।” ভাড়া বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে, তা-ও তিনি মানেন না। মদনবাবুর দাবি, “গত চৌত্রিশ বছরে সিপিএম পরিবহণে কোনও নিয়ম তৈরি করেনি। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে।” মন্ত্রী বলছেন, “মুম্বই, দিল্লি, সব জায়গায় সরকারি পরিবহণ ৯০%। বাকি ১০% বেসরকারি। এখানে হিসেবটা উল্টো।” তা হলে উপায় কী?
মন্ত্রীর দাওয়াই, “বেসরকারি মালিকেরা বাস তুলে নিলে সরকারকেই বাস বাড়াতে হবে। ভর্তুকি দিতে হলেও বাস চালিয়ে যেতে হবে।”
অর্থাৎ নীতি বজায় রাখতে সরকার আরও ভর্তুকির বোঝা ঘাড়ে নিতেও তৈরি। বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ সিন্ডিকেটের নেতা সাধন দাসের মতে, “রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবলে বেসরকারি বাস কলকাতা থেকে উঠে যাবে। তাতে ক্ষতি হবে কিন্তু সেই সাধারণ মানুষেরই। সরকার সেটা ভাবছে না।” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের দীপক সরকারের আক্ষেপ, “২০১০-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিজেলের দাম বেড়েছে সাত বার। অন্যান্য সরঞ্জামেরও দাম বেড়েছে। আমরা সত্যিই আর পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.