|
|
|
|
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো |
সমন্বয়ের অভাবে বন্ধ পথ, নিত্য দুর্ভোগ হাওড়াবাসীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেউ কথা রাখেনি।
কথা ছিল, মেট্রো রেলের কাজের জন্য জি টি রোড বন্ধ করা হবে না। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবেন যথেষ্ট সংখ্যক ট্রাফিক-কর্মী। ঠিক ছিল, কাজ চলাকালীন শহরবাসীকে যতটা সম্ভব কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সেই ব্যবস্থা করবে হাওড়া সিটি পুলিশ ও মেট্রো রেল। কিন্তু কেউই কথা রাখেনি। ফলে মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ করতে গিয়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান এলাকা। যার জেরে নিত্যদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য শহরবাসী।
বছর চারেক আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ হাওড়া ময়দান এলাকায় হাওড়া কর্পোরেশন স্টেডিয়ামের কাছ থেকে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই কাজ প্রায় এক কিলোমিটার এগিয়েছে। মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ শুরুর আগেই জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও পুলিশের সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা বৈঠক হয়। নগরবাসী যাতে কম দুর্ভোগে পড়েন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও হয়। হাওড়া ময়দান এলাকা হল কলকাতার প্রধান প্রবেশপথ। জি টি রোড-সহ শহরে ঢোকার আরও তিনটি বড় রাস্তা নেতাজি সুভাষ রোড, বেলিলিয়াস রোড ও ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস এখানে এসে মিশেছে। তাই ওই জায়গায় পথচারী ও যানবাহনের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা আগে দেখা হবে বলে ঠিক হয়।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, হাওড়া সিটি পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ১০ বছর আগে নেওয়া পুরনো ব্যবস্থার বেশির ভাগই চালু রেখেছে। অর্থাৎ, শহরের মূল চারটি রাস্তার মধ্যে তিনটি রাস্তা সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একমুখী করে দেওয়ায় শহরে ঢোকার একটি মাত্র রাস্তা পঞ্চাননতলা রোডে পৌঁছতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি মেট্রো কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জি টি রোড বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। |
|
মেট্রোর কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে পথ। এ ভাবেই নিত্য
যাতায়াত হাওড়ার বাসিন্দাদের। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জি টি রোড বন্ধ হওয়ায় এক দিকে যেমন উত্তর হাওড়ার সঙ্গে দক্ষিণ হাওড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তেমনই ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলা দূরের কথা, হাঁটাও যাচ্ছে না। পাশাপাশি, জি টি রোড সংযোগকারী যে সব গলিপথ হাওড়া ময়দান চত্বরে রয়েছে, সেই সব রাস্তায় রিকশা, সাইকেল, মোটরবাইক ঢুকে পড়ায় প্রতিদিন তীব্র যানজট হচ্ছে। হাওড়া ময়দান চত্বরে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ রয়েছে। রয়েছে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা, পুরসভা, জেলাশাসকের দফতর, জেলা আদালত, পুলিশ কমিশনারেট ও একাধিক সরকারি অফিস। ফলে, ওই সব অফিসে যেতে হাজার হাজার মানুষকে নিত্যদিন দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
মেট্রোর কাজের জন্য হাওড়া ময়দান চত্বরের এই অবস্থা নিয়ে গণতান্ত্রিক নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাওড়ার বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কথা ভুললে চলবে না। এর জন্য মেট্রো ও পুলিশের কাজের মধ্যে যাতে ঠিকঠাক সমন্বয় হয়, তা দেখা প্রয়োজন। এ জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।”
হাওড়ার ডি সি (ট্রাফিক) অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “আমরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুব শীঘ্রই ফের রাস্তায় নেমে পর্যবেক্ষণ করব। সুভাষবাবু কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।” হাওড়া ময়দানে মেট্রোর কাজের জন্য যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এম ডি সুব্রত গুপ্ত বলেন, “এ ভাবে জি টি রোড বন্ধ করে কাজ করার কথা নয়। ঠিক কী হয়েছে, দেখতে হবে। ওখানে কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। কয়েক দিনের মধ্যে ওখানে যাব।” |
|
|
|
|
|