সম্পাদকীয় ২...
গভীর অসুখ
সে কালে গ্রামের পাঠশালার প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকিতেন জমিদার। তাই তাঁহার পুত্রের অনুত্তীর্ণ হইবার উপায় ছিল না, পাঠে ভুল করিলে তর্জনগর্জনও বর্ষিত হইত না। এখন রাজা-জমিদারদের স্থান লইয়াছেন মন্ত্রীরা। কানাঘুষা শোনা যায়, প্রতিবেশী কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এক সন্তান নাকি মেডিক্যাল কলেজে প্রায় অনুপস্থিত থাকিয়াও সর্বোত্তম ফল করিয়াছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এমন কোনও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা যাইবে না। দুই-একটি ছাত্র নহে, দুইটি আস্ত মেডিক্যাল কলেজকেই তিনি ফেল হইতে পাশের তালিকায় উঠাইয়া দিয়াছেন। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া পরিদর্শন করিয়া রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করিয়াছিল। তাহার মধ্যে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন মমতা আদায় করিয়াছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক হইতে। রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে তিনি পারদর্শী, আর এ বিষয়ে তাঁহার কিঞ্চিৎ সুবিধাও ছিলকেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তাঁহারই দলের সদস্য, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিকট দরবার করিয়া বাতিল অনুমোদন পুনর্বহাল করিয়াছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়াছেন, এক বৎসরের মধ্যে তাঁহার সরকার মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ প্রভৃতি নির্দিষ্ট মানে পৌঁছাইবার চেষ্টা করিবে। সেই আশ্বাস গৃহীত হইয়াছে। এই যুক্তি মানিলে রাজ্যের সকল অকৃতকার্য ছাত্ররা পরবর্তী এক বৎসরে পাঠ শিখিয়া লইবে, এই আশ্বাস দিয়া পরীক্ষায় পাশ নম্বর দাবি করিতে পারে। কিন্তু হায়, গণতন্ত্র তো আর রতনরাও রাজার রাজত্ব নহে। ‘চোর সে যুবরাজ’ জানিয়াও বিচারক আইনের শাসনে অনড় থাকিবেন, সে দিন আর নাই। যাঁহারা আইন তৈরি করিবার জনাদেশ পাইয়াছেন, তাঁহারাই অবাধে আইন ভঙ্গ করিয়া থাকেন, এ দেশে ইহাই বিধি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। রাস্তায় লাল আলোয় গাড়ি থামাইতে হইলে বিধায়করা অপমানিত বোধ করেন, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং থানা হইতে দুষ্কৃতীদের ছাড়াইয়া লইয়া আসেন। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নির্দেশ তাঁহারা বিনা প্রতিবাদে মানিয়া লইবেন, এমন আশা দুরাশা।
‘জনস্বার্থ’র যুক্তি এ ক্ষেত্রে কুযুক্তি। কিছু বাড়তি ছাত্র ভর্তি করিবার ব্যবস্থা করিলে রাজ্যবাসীর কী লাভ হইবে? চিকিৎসকের শিক্ষা যদি ডিগ্রি-সর্বস্ব হয়, যদি সে বাস্তবে রোগীর নিরাময় করিতে অক্ষম হয়, তাহা সমাজের পক্ষে এক মর্মান্তিক বিপর্যয়। অথচ প্রস্তুতিহীন প্রতিষ্ঠান চালু হইলে তাহারই পথ প্রশস্ত হইবে। কয়েক মাসের মধ্যে হাসপাতাল হইতে মেডিক্যাল কলেজ হইয়া উঠিবার সাধ্য ওই প্রতিষ্ঠানগুলির নাই। পরিকাঠামোর জন্য কত অর্থ বরাদ্দ হইবে, কোথা হইতে তাহা আসিবে, কত দ্রুত তাহার খরচ সম্ভব, প্রয়োজনীয় শিক্ষকই বা কোথা হইতে পাওয়া যাইবে, তাহার কোনওটি নির্দিষ্ট না করিয়াই কলেজ চালু করা হইল। বাস্তবে কত দিনে এই কলেজগুলি উন্নত হইবে, প্রশ্ন শুধু তাহাই নয়। প্রশ্ন দৃষ্টিভঙ্গির। আমি চাপ দিয়া অনুমোদন আদায় করিতে পারি, অতএব তাহাই করিব ইহা রাজনীতির জুলুম, শিক্ষা কিংবা সামাজিক উন্নয়নের নীতি নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.