সম্পাদকীয় ১...
রাজনীতির পালা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত দুইটি প্রকল্প মারফত সরকার স্বাস্থ্য বিমার জন্য অর্থ দিয়া থাকে: বয়স্ক নাগরিকদের জন্য ‘মেডিকেয়ার’ এবং দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ‘মেডিকেড’। জনসংখ্যায় বয়স্ক নাগরিকদের অনুপাত বৃদ্ধির ফলে ও অন্যান্য কারণে এই দুই খাতে সরকারি ব্যয় দ্রুত বাড়িতেছে, আগামী এক দশকে মেডিকেয়ার-এর খরচ আনুমানিক আশি শতাংশ বাড়িবে। আবার সরকারি বরাদ্দ কমাইয়া নাগরিকের উপর বিমার খরচের বাড়তি অংশ চাপাইলে নাগরিক বিপন্ন হইবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই সঙ্কট মোচনের লক্ষ্যে দুই বছর আগে একটি আইন করিয়াছিলেন, সংক্ষেপে তাহার নাম ‘অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’। আইনের প্রধান দাবি, স্বাস্থ্য বিমা কিনিবার সামর্থ্য যাঁহার আছে, তাঁহাকে বিমা কিনিতেই হইবে। আইনটি কার্যকর হইলে বাড়তি প্রায় তিন কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দিতে বাধ্য হইবেন, সরকারি বাজেটের চাপ কমিবে। বিমার ধর্মই হইল, যত বেশি মানুষ তাহার আওতায় আসে, তত সাশ্রয় হয়। আবার, কেহ বিমা না কিনিয়া বড় রকমের অসুখে পড়িলে ‘জরুরি চিকিৎসা’র দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপরেই আসিয়া পড়ে, তাহার খরচ পরোক্ষে করদাতাদের পকেট হইতেই মিটাইতে হয়। অতএব, ‘ওবামাকেয়ার’।
রিপাবলিকান দল এবং বর্ষশেষের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাহার প্রার্থী মিট রমনি ডেমক্র্যাট প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগের সম্পূর্ণ বিরোধী। তাঁহাদের প্রশ্ন: স্বাস্থ্য বিমা কিনিতে কোনও নাগরিককে কেন বাধ্য করা হইবে? ব্যক্তিস্বাধীনতার মহাতীর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কী করিয়া রাষ্ট্রের এই আগ্রাসন মানিয়া লওয়া যায়? আইনসভার দুই কক্ষে এই বিরোধিতা অতিক্রম করিয়া ওবামাকেয়ার অনুমোদিত হইয়াছিল। ইতিমধ্যে বিরোধীরা আদালতে এই অভিযোগে মামলা ঠুকিয়াছিলেন যে, এই আইন অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যবিশিষ্ট বিচারকমণ্ডলীর সংখ্যাগরিষ্ঠ (পাঁচ জন) বিচারপতি রায় দিয়াছেন, প্রস্তাবিত আইনটি সংবিধানসম্মত। এই রায় চমকপ্রদ, বিশেষত এই কারণে যে ‘রক্ষণশীল’ বলিয়া পরিচিত প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস আইনের পক্ষে মত দেওয়ার ফলেই ওবামা জয়ী হইয়াছেন। লক্ষণীয়, জন রবার্টসকে সুপ্রিম কোর্টে মনোনীত করিয়াছিলেন ভূতপূর্ব রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, সেনেটের সদস্য হিসাবে ওবামা তাঁহার মনোনয়নের বিরোধিতা করিয়াছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারপতিদের প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন করেন, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়াছে, বিচারপতির আসনে বসিবার পরে তাঁহারা সেই প্রেসিডেন্ট বা তাঁহার সতীর্থদের মত ও স্বার্থের বিপক্ষে রায় দেন। নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার ইহা আবশ্যিক শর্ত। জন রবার্টসের অভিমত যাঁহারা মানেন না, তাঁহারাও অস্বীকার করেন নাই যে, এই রায় সেই ইতিহাসকেই সমৃদ্ধ করিল। সুপ্রিম কোর্টে হারিলে ওবামার ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হইত। অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমগ্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন অন্তত বলিতে পারিবেন, ‘সকলের জন্য চিকিৎসা’র রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে সাংবিধানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করিয়া স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার নীতি রচনায় তিনি একটি মৌলিক পথনির্দেশ করিতে পারিয়াছেন। ন্যায্য দাবি। কিন্তু ওবামার রাজনৈতিক লড়াই শেষ হয় নাই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কে ও প্রচারে ওবামাকেয়ার অন্যতম প্রধান বিষয় হইয়া দাঁড়াইবে। ওবামার বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট স্বয়ং। আদালত বলিয়াছে, প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য বিমা আসলে একটি ‘কর’, সেই কারণেই সংবিধানসম্মত কর বসাইবার অধিকার সরকারের আছে। অথচ ওবামা ক্রমাগত উচ্চকণ্ঠে বলিয়া আসিতেছিলেন, তিনি স্বাস্থ্য বিমার নামে নূতন কোনও কর বসাইবেন না। প্রত্যাশিত ভাবেই, সুপ্রিম কোর্টের রায়দানের সঙ্গে সঙ্গে সমালোচকরা রব তুলিয়াছেন যে, প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলিয়াছিলেন, জনসাধারণের সহিত প্রতারণা করিয়াছিলেন। এই আক্রমণের মোকাবিলা সহজ হইবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত এমনিতেই ওবামাকেয়ারের পক্ষে নহে, তাহার প্রধান কারণ: মানুষ বাড়তি কর দিতে চাহেন না। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এই বিরূপতায় ইন্ধন জোগাইবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মামলায় জয়ী। এ বার রাজনীতির পালা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.