অসমে বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ প্রধানমন্ত্রী এবং ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী বেলা ১১টা নাগাদ যোরহাটে আসেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে মাজুলি, শিবসাগর, ধেমাজি, লখিমপুর ও কাজিরঙার অবস্থা আকাশ থেকে দেখেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। গগৈ বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষয়ক্ষতির বিশদ রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রার্থনা করেন।
সফর সেরে অসমের সাংসদ তথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন বলেন, “এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষ প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হন। অসমবাসীর দুর্দশা ঘোচাতে যথাসাধ্য করবে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা অসমে আসছেন। তাঁরা সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিচার করে আমাদের জানাবেন। আপাত জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্র ৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিশদ রিপোর্ট পেলে আরও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।” বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জাতীয় সড়ক, সরকারি ভবন, স্কুল, পানীয় জল সরবরাহ কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলি যত শীঘ্র সম্ভব মেরামতের আশ্বাস দেন তিনি। জানান, ধেমাজি, বরাক উপত্যকা, মিজোরাম ও ত্রিপুরার মধ্যে পাহাড় লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করতে লাইন থেকে ধস সরানো ও লাইন মেরামতির কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। |
সরকারি হিসাবে, গত কাল অবধি বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৭। এ দিন আরও চার জন মারা গিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। এনডিআরএফ-এর ১৬টি দল ৭১টি নৌকা নিয়ে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীও প্রায় চার হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে। বিমানবাহিনী ২০ টন ত্রাণ সামগ্রী ইতিমধ্যেই বিলি করেছে। মনমোহন জানান, যে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চলছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। পরের দুই দিন, উদ্ধারকাজের উপরেই জোর থাকছে। তারপর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া হবে। বন্যার ধাক্কা সামলে ওঠার পরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে র্দীঘমেয়াদি প্রকল্পগুলি নিয়ে জোরকদমে কাজ শুরু করবে রাজ্য ও কেন্দ্র। কৃষকদের প্রয়োজনমতো বীজ সরবরাহ করা হবে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো নিশ্চিত করার উপরে প্রধানমন্ত্রী জোর দেন। বলেন, “বন্যা ও ধসে মৃতদের নিকটাত্মীয়দের এক লক্ষ টাকা করে কেন্দ্রীয় সাহায্য দেওয়া হবে।”
তবে, প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়ার আকাশপথে বন্যা-দর্শনের নিন্দা করেছে পরেশপন্থী আলফা ও কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। বরপেটার ভেলা, বাহারি, কায়াকুচি-সহ বহু এলাকায় এ দিন কেন্দ্র ও রাজ্যের বঞ্চনার প্রতিবাদে বন্যার্তরা পথ অবরোধ করেন। মনমোহন-সনিয়ার কুশপুতুল পোড়ানো হয়। বরপেটার জনিয়ায় এ দিনও জলে পড়ে নিখোঁজ হয় চারটি শিশু। মরিগাঁওতে নেলির কাছে নৌকাডুবি হয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। কাজিরাঙার লাগোয়া কার্বি আংলংয়ের জঙ্গলে দু’দিনে চোরাশিকারিদের হাতে মারা পড়ল বানভাসি দু’টি গন্ডার। |