দিল্লিতে ছেলের বিয়ের ভোজসভাকে সামনে রেখে আজ গোটা বিজেপিকে একত্রিত করার কৌশল নিলেন দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোন্দলে দীর্ঘদিন ধরেই জেরবার হচ্ছে বিজেপি। রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রশ্নে ফাটল ধরেছে এনডিএ-তেও। এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক অনুষ্ঠানের ঘরোয়া মেজাজকে যথাসম্ভব রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণে কাজে লাগালেন বিজেপি সভাপতি। লক্ষ্য, দু’টি। এক, দলের একটা ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরা। দুই, সুকৌশলে দলের নেতা হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করা।
রাজনীতিকদের ঘরোয়া আলোচনায় ইদানীং এমন কটাক্ষও শোনা যায় যে, খাস রাজধানীতেই প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি প্রায় অপরিচিত মুখ। আজ ছেলের বিয়ের ভোজে কার্যত তারই জবাব দিলেন গডকড়ী। ‘শক্তি প্রদর্শনের’ পাশাপাশি সব মহলে নিজের গ্রহণযোগ্যতারও একটা প্রমাণ রাখার চেষ্টা চালালেন তিনি। দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে ছেলের বিয়ের ভোজে হাজির করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, নরেন্দ্র মোদী, বি এস ইয়েদুরাপ্পা, সদানন্দ গৌড়া-সহ দলের তাবড় বিতর্কিত-অবিতর্কিত মুখকে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কেঅ্যান্টনি, কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি-সহ এনডিএ-ইউপিএ-র তাবড় নেতা, শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী, সুব্রত রায়, যোগগুরু রামদেব, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম (উপহার দিলেন নিজের লেখা বই) থেকে শুরু করে শীলা দীক্ষিত, মেঘনাথ দেশাই, প্রহ্লাদ কক্কর, অমর সিংহ, বরুণ গাঁধী, সদ্য মেয়ের বিয়ে দেওয়া হেমা মালিনী কে ছিলেন না সেখানে! গত সপ্তাহে ছেলের বিয়ের দিনই নাগপুর থেকে দলের সভাপতি হিসেবে বিবৃতি দিয়েছিলেন গডকড়ী। জোটের পক্ষে ক্ষতিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের ও জোটের শরিক নেতাদের। আর আজ ছেলের বিয়ের ভোজের দিনেও গডকড়ী সকাল থেকে একের পর এক বৈঠক করেন কংগ্রেস-বিরোধী আন্দোলনে গোটা দলকে একত্রিত করার লক্ষ্যে। অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের উপস্থিতিতে বিজেপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী পূর্ণ সাংমাকেও ডেকে আনা হয় অশোকা রোডের সদর দফতরে। বিজেপি দাধিকারীদের বৈঠকেও সাংমা সকলকে ধন্যবাদ জানান। |
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগে কংগ্রেস জর্জরিত। এ অবস্থায় ২০১৪-তে দিল্লি দখলের আশা দেখছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে দলকে সংগঠিত রাখাটাই এখন গডকড়ীর প্রধান লক্ষ্য। সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচন তাঁরই নেতৃত্বে লড়বে দল। এই সব মাথায় রেখেই গডকড়ী আজ বুঝিয়ে দিলেন দলের নেতা হিসেবে সবাইকে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখেন তিনি।
কিছু দিন আগেও গডকড়ীর নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছিল দলের অন্দরে। প্রবীণ নেতা আডবাণীও তাঁর ব্লগে সভাপতির কড়া সমালোচনা করেন। প্রকাশ্যে ও আরএসএসের কাছে ক্ষোভ জানান উত্তরপ্রদেশে দলের কৌশল, ঝাড়খণ্ড রাজ্যসভা নির্বাচনে অংশুমান মিশ্রকে সমর্থন করার মতো বিষয় নিয়ে। সুষমা স্বরাজরাও সভাপতির কৌশলে সন্তুষ্ট নন। এর পরেই হস্তক্ষেপ করে সঙ্ঘ। গডকড়ীকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে এগোনোর পরামর্শ দেয়। এর পর থেকে গডকড়ী এখন মাসে অন্তত দু’বার দলের কোর গ্রুপের বৈঠক ডেকে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে বৃহত্তর এনডিএ গড়ার কাজটিও তিনি ছেড়ে দেন আডবাণীর উপরে। আজ ভোজসভার ঠিক আগেই মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক হয় আডবাণীর বাড়িতে। দলে কিছুটা বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে আডবাণীর মুখেও এখন সঙ্ঘের প্রশস্তি। আজ নিজের ব্লগেও তিনি সঙ্ঘের তারিফ করেছেন। হাসিমুখে সামিল থেকেছেন গডকড়ীর ‘পারিবারিক’ ভোজে। এসেছিলেন দলের আরএক বিতর্কিত মুখ নরেন্দ্র মোদীও। তাঁকে ঘিরে দলীয় নেতা- কর্মীদের উন্মাদনার ছবিটা দেখা গেল ভোজের আসরেও। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছবিও তুললেন নবদম্পতির সঙ্গে। তবে ঠিক পাশে নয়, ছবির ফ্রেমে মোদী ধরা থাকলেন গডকড়ী থেকে ঈষৎ ব্যবধানেই। |