প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লাভজনক পদে থাকার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করার দাবি তুললেন পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা এবং বিজেপি নেতৃত্ব। সাংমা এবং বিজেপি-র দাবি, মনোনয়ন পেশ করার পরেও প্রণববাবু কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) চেয়ারম্যান পদে থেকে গিয়েছেন। তবে, সরকার তথা কংগ্রেস আজই সেই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়ে দিয়েছে, গত ২০ জুন, মনোনয়ন পেশের এক সপ্তাহ আগেই প্রণববাবু ওই পদে ইস্তফা দিয়েছেন। |
আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেলের কক্ষে মনোনয়নপত্র পরীক্ষার সময় প্রণববাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান খোদ সাংমা ও বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী সত্যপাল জৈন। সেই সময় প্রণববাবুর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল। সাংমাদের আকস্মিক অভিযোগের পর তাঁরা লিখিত জবাব পেশের জন্য দু’দিন সময় চান। কিন্তু তাতেও আপত্তি তোলেন জৈন। তিনি বলেন, আইন অনুসারে এক দিনের বেশি সময় দেওয়া উচিত নয়। স্থির হয়েছে, আগামিকাল দুপুর দু’টোর মধ্যে প্রণববাবুর পক্ষ থেকে লিখিত জবাব দেওয়া হবে। তার পর তিনটেয় ফের শুনানি হবে।
এই ঘটনার পরেই প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন চিদম্বরম ও বনশল। তার পর সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “প্রণববাবু ২০ তারিখেই ইস্তফা দিয়েছেন। সরকার সেই সংক্রান্ত নথি রিটার্নিং অফিসারের কাছে পেশ করবে।” কংগ্রেস সূত্রেও বলা হয়, প্রণববাবু এই সব বিষয়ে সদা সচেতন। তিনি সময়মতোই পদত্যাগপত্র আইএসআই-এর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কলকাতায় আইএসআই-এর তরফেও জানানো হয়েছে, ২০ জুন চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রণববাবু। সাংমাদের বক্তব্য ছিল, আজ সকাল পর্যন্ত আইএসআই-এর ওয়েবসাইটে প্রণববাবুকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “ভুল করে প্রণববাবুর নাম ওয়েবসাইটে থেকে গিয়েছে। যেমন আইএসআই-এর অনেক অবসরপ্রাপ্ত পদাধিকারী এবং প্রাক্তনীদের নামও রয়েছে।”
জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী কোনও সাংসদ বা বিধায়ক লাভজনক পদে থাকতে পারেন না। কেউ রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীও হতে পারেন না। এ নিয়ে ২০০৫ সালে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। লোকসভার সদস্য থাকার পাশাপাশি সনিয়া গাঁধী তখনও জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন ছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। সেই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে। কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলির কোনও পদ লাভজনক বলে গণ্য হবে না। জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের পাশাপাশি আইএসআই-কেও সেই সময় ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
বিজেপির অবশ্য দাবি, আইএসআই-এর চেয়ারম্যান পদে থেকে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন না। সে সঙ্গে তাদের অভিযোগ, প্রণববাবু ওই পদে ইস্তফা না দিলেও সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই পরিস্থিতিতে কাল শুনানির সময় আরও তথ্য পেশ করার দাবি করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সরকার যাতে তথ্য বিকৃত করতে না পারে, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছেও আইএসআইয়ের যাবতীয় নথি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। তবে কাল প্রণববাবু শুনানিতে জিতলেও রাজনৈতিক ক্ষতি দেখছে না বিজেপি। দলের নেতাদের কথায়, রাষ্ট্রপতি ভোটের পরিণতি যা-ই হোক, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে চাপে রাখাই বিজেপি-র লক্ষ্য। প্রণববাবু তথা কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার কৌশল ঠিক করতে আজ বিজেপি দফতরে সভাপতি গডকড়ী ও অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন সাংমা।
আজই প্রণববাবুর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কিছু রাজ্যকে আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ আনেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। অভিযোগ খারিজ করে বনশল বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে যোজনা কমিশন যোজনা বরাদ্দ ঠিক করে। এর সঙ্গে ভোট কেনার সম্পর্ক কোথায়!” কংগ্রেসকে চাপে ফেলার সুযোগ পাওয়ার দিনেই বিজেপি নেতৃত্বকে খানিক স্বস্তি দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা তাঁদের জোটশরিক জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ভোটে তিনি ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করছেন, ইউপিএ- কে নয়। নীতীশের কথায়, “প্রণববাবু দীর্ঘদিনের নেতা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আমার মতে, বাংলা থেকে এক জন রাষ্ট্রপতি হওয়া উচিত। আর সে ক্ষেত্রে প্রণববাবু যোগ্যতম প্রার্থী।” |