|
|
|
|
পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনে নির্দেশিকা রাজ্যের |
কৌশিক চৌধুরী • শিলিগুড়ি |
উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকে সামনে রেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে জোর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উত্তরবঙ্গের জন্য স্বতন্ত্র ‘ইকো ট্যুরিজম গাইড লাইন-২০১২’ তৈরি হচ্ছে। জঙ্গল, বন্যপ্রাণের পাশাপাশি সংরক্ষিত এলাকার হেরিটেজ ভ্যালু, পরিবেশ, সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ইকো ট্যুরিজমের পরিকাঠামো তৈরি, পর্যটনের কাজে স্থানীয় উৎপাদিত জিনিসের ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের পর্যটনকে সামনে রেখে সরকারের এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের দাবি। মন্ত্রী বলেন, “৩৪ বছর ধরে উত্তরবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রটি একেবারেই অবহেলিত ছিল। খাপছাড়া ভাবে কিছু প্রকল্প হয়েছে। ইকো ট্যুরিজমের কোনও সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ ‘টাস্ক ফোর্স’ এবার ওই কাজ করছে।” এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই গজলডোবা, চিলাপাতা-সহ নানা এলাকায় প্রকল্প তৈরি হবে বলে গৌতমবাবু জানিয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন, পরিবেশ এবং বন মন্ত্রকের নির্দেশিকাকে সামনে রেখে রাজ্য সরকার ১১ পাতার নতুন খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করছে। গত মাসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পর্যটন সংগঠনকে গাইড লাইনটির খসড়া পাঠিয়ে তাঁদের মত চেয়েছে রাজ্য সরকার। ৪ অগস্টের মধ্যে ওই মত জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন এবং পর্যটন দফতরের একটি দল ওই নির্দেশিকা বা গাইডলাইন তৈরির কাজ করছে। পুজোর আগে নির্দেশিকাটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্দেশিকার প্রথম ভাগেই স্পষ্ট ভাবে এমন পর্যটনের প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে যা বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণের উপর ‘খুব একটা’ প্রভাব ফেলবে না। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য, পরিবেশ, সংস্কৃতি তুলে ধরার কথাও রয়েছে। বিশেষ করে এর জন্য নির্দিষ্ট ‘জোন’ বা এলাকা তৈরির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পেই স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুসারে বিশেষ দফতর, ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, আদিবাসী হস্তশিল্প বিক্রয় কেন্দ্র তৈরির কথা রয়েছে। অডিও ভিস্যুয়াল প্রোগ্রাম, নেচার ক্যাম্প, বার্ড ওয়াচিং পয়েন্ট, প্রজাপতি কেন্দ্র, ভিলেজ ট্যুরিজম, পর্যটন বিমা, হেরিটেজ সাইট, ওয়াচ টাওয়ার ছাড়াও পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী (বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, সোলার লাইট, ভেষজ সবজি, দুধ, বর্জ্য পদার্থের রিসাইকিলিং) ক্ষেত্রে কী কী করতে হবে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বন দফতরে কয়েক জন অফিসার জানান, এত দিন উত্তরবঙ্গ এবং গোটা রাজ্যের খাপছাড়া ভাবে ইকো ট্যুরিজমের নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেগুলির অধিকাংশ সঠিক আইনকানুন মেনে হচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠছিল। বিশেষ করে সংরক্ষিত জঙ্গলের এক কিমির মধ্যে হোটেল, রিসর্ট বা রেস্তোরাঁ প্রকল্প অনুমোদন সাপেক্ষ বিষয়। যা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় মানাই হয় বলে অভিযোগ। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশেই বহুতল রিসর্ট তৈরির ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে জঙ্গল, বন্যপ্রাণ প্রভৃতিকে পর্যটক বা বাসিন্দাদের ঘিরে কী করা উচিত বা কী অনুচিত তারও বিস্তারিত নির্দেশিকা ছিল না। যা এ বার তৈরির মুখে। নতুন নির্দেশিকা তৈরির পর তা কার্যকর হলে পর্যটন, বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক বিকাশ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের পাহাড়, জঙ্গল, বন্যপ্রাণ সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত থাকবে। |
|
|
|
|
|