|
|
|
|
বন্দুক রেখে বনের পথে সঙ্গী জঙ্গিরা |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
কাঁধে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে ‘আতঙ্ক’ ছড়িয়ে বেড়ানোর দিনগুলিকে পিছনে ফেলে হাতজোড় করে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা। একদা বাইক নিয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে অসম হয়ে ভুটান পর্যন্ত ছিল যাঁদের অবাধ যাতায়াত, সেই অনন্ত, চন্দন, অতুল, বিশ্বনাথরা এখন পর্যটকদের বনের অলিগলিতে ঘোরানোর রুট তৈরি করছেন। ডুয়ার্সের রামসাই এলাকায় বন বিভাগের ‘রাইনো ক্যাম্প’-এর পাশে গেলেই মূলস্রোতে ফেরা কেএলও জঙ্গিদের পর্যটন কেন্দ্র তৈরি কর্মকাণ্ড চোখে পড়বে। ওই কাজটা যাতে তাড়াতাড়ি হয়, সে জন্য অনেকদিন আগেই ওঁরা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়েছেন। ওঁদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। জেলা গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্রের (ডিআরডিসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেই গড়া হচ্ছে ‘রুরাল মার্কেট ইয়ার্ড কাম ট্যুরিস্ট লজ’। তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে সংস্থাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে অনন্ত রায়, চন্দন রায়, অতুল রায়, বিশ্বনাথ রায়, কমলেশ রায়, বিজয় রায় ও সরেন রায়দের মতো মূলস্রোতে ফেরা যুবকদের। সব মিলিয়ে প্রায় ১ বিঘা জমির উপরে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরির কাজ চলছে। খরচ হবে প্রায় ১ কোটি টাকা। সেখানে ৪টি কটেজ ছাড়াও থাকবে ‘ডাইনিং হল’। প্রকল্পের নামকরণে ‘ট্যুরিস্ট লজের’ সঙ্গে রয়েছে ‘রুরাল মার্কেট ইয়াডর্’। |
 |
ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক। |
কারণ, সেখানে থেকে পর্যটকরা গ্রামের বিভিন্ন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর তৈরি সামগ্রী কেনার সুযোগ পাবেন। থাকবে স্টল। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত বলেন, “বড় মাপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জঙ্গিদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা তৈরি হবে।” কেন পর্যটন প্রকল্প? জেলা পরিষদের কর্তারা জানান, রামসাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছিল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে নিজেরা কিছু করে উঠতে পারেনি। ওঁরা কয়েকবার জেলা পরিষদে যান। গরুমারা জঙ্গলকে ঘিরে রামসাই এলাকায় গড়ে ওঠা পর্যটন শিল্পে তাঁদের যুক্ত করার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। এর পরেই জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ পর্যটক আবাস সহ এমন একটি প্রকল্প তৈরির কথা ভাবেন যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, “কয়েকজন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি নয়। আমরা বিপণনের ব্যবস্থা করে গ্রামীণ কারিগর ও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাও মাথায় রেখেছি।” এক দিকে চা বাগান। অন্যদিকে জলঢাকা নদী। মাঝে এক ফালি জমিতে গড়ে উঠছে রুরাল মার্কেট ইয়ার্ড কাম ট্যুরিস্ট লজ। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় বন বিভাগের মেদলা নজর মিনার। কয়েক মাস আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে অনন্ত,, চন্দনরা আশায় বুক বেঁধেছেন। প্রসঙ্গত, ওই যুবকেরা ১৯৯৯ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে ভুটানে কেএলও শিবিরে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর জঙ্গি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পরে ২০০২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফেরেন। এর পরে শুরু হয় কাজের খোঁজে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে বেড়ানো। অভিযোগ, আশ্বাস ছাড়া সাহায্য মেলেনি কোথাও। অনন্ত বলেন, “অবশেষে জেলা পরিষদ এগিয়ে আসায় আমরা দু’বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার পথ দেখছি।” শীতের মরশুমে প্রকল্পটি চালু করার চেষ্টা চলছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ শেষ হলে রুম ভাড়া ঠিক করে প্রতিষ্ঠনটি অনন্ত, অতুল, বিশ্বনাথ, কমলেশদের ‘লিজ’ দেওয়া হবে। |
|
|
 |
|
|