|
|
|
|
দেশেই লগ্নির আর্জি |
মুকেশের সমস্যাও শুনলেন মন্টেক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভোডাফোনের চেয়ারম্যান অনলজিৎ সিংহ, কিংফিশারের বিজয় মাল্যর পরে এ বার রিলায়্যান্স শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী। প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছেন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাঁদের সমস্যা শুনছেন এবং উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করছেন। সরকারের তরফে অনুরোধ জানাচ্ছেন, তাঁরা যেন এ দেশে বিনিয়োগ থেকে পিছু না হঠেন। এ ভাবেই ধাপে ধাপে শিল্পমহলের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে মনমোহন সিংহের সরকার। লক্ষ্য একটাই, দেশের অর্থনীতির হাল ঘোরানো।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই যোজনা ভবনে শিল্পপতিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কর ফাঁকি প্রতিরোধ বিধির (জিএএআর) মতো বিষয়ে ধীরে চলার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি শিল্পমহলে তৈরি হওয়া আতঙ্ক কাটাতে চাইছেন। আবার শিল্পপতিদের সমস্যা শুনে তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্টেককে। এই ‘আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ’-এর অঙ্গ হিসেবেই আজ মুকেশের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন মন্টেক। প্রাকৃতিক তেল-গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র পাওয়া ও গ্যাসের দাম ঠিক করা নিয়ে কিছু দিন ধরেই রিলায়্যান্সের সঙ্গে কেন্দ্রের টানাপোড়েন চলছে। কী ভাবে এর দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, তা নিয়ে আজ মন্টেক-মুকেশের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আবার মুকেশ যাতে তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, সে অনুরোধও করেছেন মন্টেক। |
 |
মুকেশ অম্বানীর সঙ্গে মন্টেক সিংহ। ছবি: পিটিআই |
প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং অর্থ মন্ত্রকেও তৎপরতা তুঙ্গে। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেখানে শ্লথতা এসেছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে প্রথম দিনের বৈঠকেই মনমোহন এর উল্লেখ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ অর্থ বিষয়ক সচিব আর গোপালন মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকার যাবতীয় পদক্ষেপ করবে।
অর্থ মন্ত্রকের নতুন কাণ্ডারীর উপরে অবশ্য আস্থা রাখছে শিল্পমহল। আর্থিক সংস্কারের নতুন কোনও কর্মসূচি এখনও কোনও ঘোষণা হয়নি ঠিকই। তবে বণিকসভাগুলি আশা প্রকাশ করেছে, খুব শীঘ্রই তা হবে। দেশের ১৫০ জন সিইও-র মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন। সমীক্ষায় ৮০% সিইও মত দিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর ভূমিকায় মনমোহন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন না বলেই তাঁরা আশা করছেন। এখনও পর্যন্ত সেই ইঙ্গিতই মিলেছে। ভোডাফোন-হাচিসনের মতো চুক্তির ক্ষেত্রে কর বসানো নিয়ে সরকার যে সুর নরম করছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। মন্টেক বলেছেন, “এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, খুব দ্রুত তা দূর করা হবে।” শিল্পমহলের একটা বড় অংশ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দুষলেও মন্টেকের মতে, শিল্পমহলের অসুবিধা বুঝেই প্রণব নতুন বিধি চালু হওয়ার সময় পিছিয়ে দিয়েছেন। ভোডাফোনের চেয়ারম্যানকে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করার কথা বলেছেন মন্টেক।
আজ মুকেশ অম্বানীর সমস্যাগুলি নিয়েও তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন মন্টেক। কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকা থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ার রিলায়্যান্স শিল্পগোষ্ঠীর উপরে জরিমানা বসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গ্যাসের দাম তিন গুণ বাড়াতে চাইছেন মুকেশ। টু-জি স্পেকট্রামের নতুন করে নিলামের সময়ও মুকেশের সংস্থা তাতে অংশ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আজকের বৈঠকেও এই বিষয়গুলিই উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, রিলায়্যান্সের মতো সংস্থা সরকারের উপরে আস্থা হারালে দেশের ক্ষতি।
মিউচুয়াল ফান্ড ক্ষেত্রেও কর নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি চাইছে, পরিষেবা করের দায় লগ্নিকারীর উপর চাপানো হোক। ২০০৯-’১০ সাল থেকেই এ ক্ষেত্রে নতুন পুঁজি আসার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি ক্রেতাদের থেকে আদায় করা ফি-তে এজেন্টদের কমিশন দিত। ২০০৯ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমিশনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে তারা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রির উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। এই বিষয়টিও আজকের বৈঠকে উঠে এসেছে। অর্থ বিষয়ক সচিব আর গোপালন জানান, মিউচুয়াল ফান্ডগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি লগ্নিকারীদের সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি নেওয়া হবে। বিমা ও পেনশন তহবিল ক্ষেত্রে এই সংস্থাগুলির ভূমিকা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, আগামী কয়েক দিনে মন্টেক আরও কিছু শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন। শিল্পমহলের সঙ্গে ইউপিএ সরকারের যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে, তা মোটানোর জন্য মন্টেকের উপরেই ভরসা রাখছেন মনমোহন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও ক্ষেত্র ধরে ধরে খুঁটিনাটি সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন। |
|
|
 |
|
|