তিন মাসে মাত্র ১টি আবেদন
রাজ্যের অর্থতালুকে লগ্নির ডাকে সাড়া নগণ্য
প্রচারে কোনও কমতি নেই। তবু নিউটাউনের প্রস্তাবিত অর্থতালুক (ফিনান্সিয়াল হাব)-এ বিনিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে কার্যত কোনও সাড়া মিলছে না।
বাম আমলে প্রস্তাবিত সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ থেকে সরে এসে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মার্চে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা নিজেরাই গড়বেন অর্থতালুক। পরের তিন মাসে আগ্রহী লগ্নিকারীদের থেকে আবেদনপত্র চেয়ে তিন-তিন বার বিজ্ঞাপন দিয়ে সময়সীমা বাড়িয়েছে হিডকো। শিলান্যাস অনুষ্ঠান ছাড়াও কলকাতা, দিল্লির মতো শহরে বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং-সহ নানাবিধ প্রচারের পিছনে বেরিয়ে গিয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
সোমবার পর্যন্ত সাকুল্যে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আবেদন করেনি বলে সরকারি সূত্রের খবর। শেষ বিজ্ঞাপনে সময়সীমা রাখা হয়েছে ৩১ জুলাই। হিডকো-র চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন জানাচ্ছেন, “খুব বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েনি।” যদিও তাঁর যুক্তি, “সাধারণত সময়সীমার শেষের দিকে আবেদনপত্র বেশি আসে। দেখা যাক।”
অর্থতালুক বা ফিনান্সিয়াল হাব’কে বলা যেতে পারে আর্থিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র। ব্যাঙ্ক, বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ বিবিধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেখানে ফ্রন্ট অফিস, শাখা অফিস, ডেটা অফিস খোলে। থাকে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, শেয়ার ও ঋণপত্র কেনা-বেচার বন্দোবস্ত। সোজা কথায়, এক চৌহদ্দিতে সংস্থা ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবার সংস্থান। তবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)-এর মতো ‘ফিনান্সিয়াল হাব’-এর কোনও নির্দিষ্ট সরকারি তকমা নেই। বিষয়টি অনেকটাই ধারণাগত। যে কারণে ফিনান্সিয়াল হাব গড়তে সরকারি অনুমতিরও প্রশ্ন ওঠে না।
কিন্তু রাজ্যের অর্থতালুক প্রকল্পে সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের সাড়া সে ভাবে না-মেলায় ইতিমধ্যে প্রশাসনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাম জমানায় হাবের শিলান্যাসের পরে তিনটি ব্যাঙ্ক এখানে প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদের দু’টিকে জমি হস্তান্তরের দিনও স্থির হয়ে গিয়েছিল। তবে গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে অর্থতালুকের নতুন শিলান্যাসের পরে বিনিয়োগে এখনও সেই রকম উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। এ হেন ‘অনাগ্রহ’ কেন?
সরকারের একটি মহলের ব্যাখ্যা: বাম আমলে নিউটাউনে অর্থতালুক তৈরির প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক খুব দ্রুত ছাড়পত্র দিয়েছিল। উপরন্তু নিউটাউনের অর্থতালুকে লগ্নির আহ্বান জানিয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্দেশে পরোক্ষে বার্তাও পাঠানো হয়েছিল মন্ত্রকের তরফে। সরকারের এক মুখপাত্রের কথায়, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লগ্নি-সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের অনুমতিনির্ভর না-হলেও বাস্তবে মন্ত্রকের ‘সবুজ সঙ্কেত’ ছাড়া কেউই বিনিয়োগে উৎসাহ দেখায় না।”
এই জায়গাতেই কিছুটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশ। তাদের বক্তব্য: বাম আমলে হিডকো-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌতম দেব প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে অর্থতালুকের কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। নতুন সরকারের আমলে সমন্বয়ের ছবিটা তত পরিষ্কার নয় বলে তাদের দাবি। মহাকরণের খবর: অর্থতালুক প্রকল্পে দিল্লির সহযোগিতা চেয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কিন্তু দিল্লির দিক থেকে এখনও তেমন সাড়া আসেনি।
ফিনান্সিয়াল হাব গড়তে কত জমি প্রয়োজন, তা নিয়েও বিতর্ক। মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা-কুরলায় হাব গড়ে উঠেছে তিনশো একর জমিতে। নিউটাউনেও একই পরিমাণ জমিতে হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল বাম সরকার। তাদের দাবি ছিল, ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিজিং ফিনান্স সার্ভিস (আইএলএফএস)-এর রিপোর্টে অর্থতালুকের জন্য তিনশো একর জমির প্রয়োজনীয়তাই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে মাত্র ২৫ একর জমি চিহ্নিত করেছে রাজ্যের নতুন সরকার। পরিমাণটা ভবিষ্যতে সামান্য কিছু বাড়তে পারে। এত কম জমি কেন?
সরকারের যুক্তি: বান্দ্রা-কুরলায় প্রকল্প ও পরিকাঠামো মিলিয়ে তিনশো একর জমি রয়েছে। এখানে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২৫ একর। রাজ্যের দাবি, নিউটাউন একটি শহর হওয়ার সুবাদে সেখানে যাবতীয় পরিকাঠামো এমনিতেই মজুত। যদিও প্রশাসনের অনেকের মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির থেকে তেমন সাড়া না-পাওয়ার অন্যতম কারণ এই জমি-বিতর্ক। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, “কোনও মন্তব্য করব না।”
নিউটাউনের সিবিডি এলাকায় অর্থতালুকের জন্য ৯টি প্লট ৯৯ বছরের লিজে দেওয়া হবে। সিন্থেসিস বিল্ডিংয়ে ১ লক্ষ বর্গফুট ভাড়া দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত অঞ্চলের বাইরে দশ একর জমি কিনেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। সেখানে তারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.