সর্বদলের দাবি খারিজ করে নজরদার কমিটি
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সিপিএমের সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি খারিজ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের ওই প্রস্তাব সম্পর্কে মহাকরণে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সরকার জানে, কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। ওঁদের জ্ঞান কম দিতে বলবেন! কৃষি বিপণন দফতরটা তো বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছেন! কোনও লোক নেই। সব আমাদের এসে করতে হচ্ছে!”
তার ঠিক আগেই প্রশাসন এবং বাজারের প্রতিনিধিদের বৈঠক ডেকে সরকারের করণীয় ঠিক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সব্জির মূল্যবৃদ্ধি রুখতে প্রশাসন এবং বাজারের প্রতিনিধিদের দিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স বা নজরদারি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছেন। ফড়েদের রমরমার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা থেকে শুরু করে সব্জির মূল্য বেঁধে রাখতে নজরদারি চালাবে ওই টাস্ক ফোর্স। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “টাস্ক ফোর্স প্রতি দিন নজরদারি চালাবে। পুলিশ, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ অভিযান চালাবে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদেরও নজর রাখতে বলা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ দিন রাতে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু পাল্টা বলেছেন, “উনি মানবেন না, আমরা জানতাম! উনি তো সর্বদল আলোচনায় বিশ্বাস করেন না! বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময় আলোচনায় ডাকলে আসতেন না।”
মুখ্যমন্ত্রী বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির দায় নিচ্ছেন না। সরকারি নজরদারি কোথায়?

সরকার জানে, পরিস্থিতির মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয়। ওঁদের (সিপিএম) জ্ঞান কম দিতে বলবেন।
বাম আমলে সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে কিছু করা হয়নি বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ সালে এই সময়ে ৮০ টাকা কিলো বেগুন ছিল। কিলো প্রতি আলুর দাম ছিল ২৪ টাকা। রাজনীতি করবেন না। কী করছিলেন তখন?” গত কয়েক দিন ধরে সব্জির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পিছনে যে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ রয়েছে, এ দিন ফের সেই অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো বৈঠকে জিজ্ঞেস করেছি, আগে কোন কোন পার্টিকে কাটমানি দিতেন! এর মধ্যে রাজনৈতিক শিল্পকলা রয়েছে। সবই টাকা খাওয়ার খেলা!” সার্বিক ভাবে রাজ্যে সব্জির দাম বাড়ার পিছনে অবশ্য ফড়েদেরই হাত রয়েছে বলে মনে করছেন মমতা। তিনি বলেন, “কীসের জন্য দাম বাড়ছে, আমরা নজর রাখতে শুরু করেছি। উৎপাদনে ভাটা নেই। আলু, চাল, সব্জি পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে। একমাত্র লঙ্কার ফলন কম হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী যে দিন বাজার-দর নিয়ন্ত্রণে বৈঠক করছেন, সেই দিনই বিধানসভায় মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে সরব হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্ট। অধিবেশনের প্রথম পর্বে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব আনেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্রস্তাবটি পাঠ করতে দিলেও আলোচনার কোনও সুযোগ দেননি। তাঁর যুক্তি ছিল, মূল্যবৃদ্ধি মুলতুবি প্রস্তাব এনে আলোচনা করার মতো বিষয় নয়। বাম বিধায়করা মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দাবিতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিধানসভার বাতিস্তম্ভে সব্জি ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। কিছু ক্ষণ বিক্ষোভের পরে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করে বামেরা।
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার বিধানসভায়। নিজস্ব চিত্র
বাইরে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, মূল্যবৃদ্ধি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয় বলেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বসছেন। অথচ সেই বিষয়কে মুলতবি প্রস্তাবের ‘যোগ্য’ বলে মনে করলেন না! বিরোধীদের আরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির ‘দায়’ নিচ্ছেন না। সূর্যবাবুর বক্তব্য, কিছু জিনিসের দাম বাড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। কিন্তু সেখানেও তৃণমূল শরিক। তাই তারা ‘দায়’ এড়াতে পারে না। আর কিছু জিনিসের দাম সরাসরি রাজ্য সরকারই বাড়াচ্ছে। সূর্যবাবুর কথায়, “হিমঘরে আলু উপচে পড়ছে। অথচ বাজারে আলুর দাম বাড়ছে আর আলুচাষি ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না! সরকারের নজরদারি কোথায়?”
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য চাইছেন, ‘নজরদারি’র প্রক্রিয়াকেই সচল রাখতে। সব্জির দামের পরিস্থিতি ‘যাচাই’ করতে শনিবার সকালে কলকাতার কয়েকটি বাজারে ঝটিতি-হানা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তিনি এ দিন মহাকরণে প্রশাসন এবং বাজারের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কৃষি-বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, উদ্যান পরিচর্যা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস-সহ তিন দফতর, পুলিশ, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, কলকাতা পুরসভা, বড়বাজার, পোস্তা বাজার-সহ বিভিন্ন বাজার, হিমঘর এবং পাইকারি বিক্রেতাদের প্রতিনিধিরা। ঘণ্টাখানেকের ওই বৈঠকে কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী অরূপবাবুকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার জন্য ‘মৃদু ভর্ৎসনা’ও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে গত বছর একই রকম টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাস্ক ফোর্স যে ঠিকমতো কাজ করেনি, তা-ও এ দিন ‘কার্যত’ স্বীকার করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। বামেদের সুরেই মুখ্যমন্ত্রীরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ফরওয়ার্ড ট্রেডিং’ নীতির জন্যও সব্জির দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, “আমরা বলে দিয়েছি, এ রাজ্যে ফরওয়ার্ড ট্রেডিং মানব না।” প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিনই ‘অবৈধ ভাবে মজুত’ করা আলুর পরিমাণ খতিয়ে দেখতে হুগলি জেলা পুলিশ আচমকা হানা দেয় চুঁচুড়ার একটি হিমঘরে। ওই দলে কৃষি বিপণন আধিকারিকরাও ছিলেন।

পাইকারি আর খোলা বাজারে
(সোমবার বিকেলের দর)
সব্জি কোলে মার্কেট মানিকতলা ল্যান্সডাউন

ঢ্যাঁড়স ৭০ (প্রতি কেজি ১৪) ৩০ ৩৫
বেগুন (বড়) ১৪০ (প্রতি কেজি ২৮) ৫০ ৬০
ঝিঙে ৮০ (প্রতি কেজি ১৬) ৩০ ৩০
লঙ্কা ৪৬০ (প্রতি কেজি ৯২) ২০০ ২০০
উচ্ছে ১৭৫ (প্রতি কেজি ৩৫) ৫০ ৬০
পটল ৮০ (প্রতি কেজি ১৬) ৩৫ ৩৫
(দাম টাকায়)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.