স্ত্রীকে হাতুড়ি ও দায়ের কোপে খুনের অভিযোগে দুই পা না থাকা এক প্রতিবন্ধীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, যৌনসম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়াতেই খেপে উঠে তিনি স্ত্রীকে আঘাত করেন বলে ধৃত জেরায় কবুল করেছেন। যদিও পুলিশ তা বিশ্বাস করেনি।
ধৃতের নাম জগবন্ধু দাস। রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর দুই ছেলের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বর্ধমান শহরের টাউনহল পাড়ায় তাঁদের বাড়িতে যায়। তাঁর স্ত্রী, গুরুতর জখম পুতুল দাসকে (৪২) বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও সোমবার সকালে তিনি মারা যান। মৃতার বড় ছেলে রক্ষয় দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে জগবন্ধুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ধৃতের কাছ থেকে দা ও হাতুড়ি উদ্ধার হয়েছে। দুটিই রক্তমাখা। হাতুড়িতে রক্ত ছাড়াও মৃতার চুল লেগেছিল। জগবন্ধুর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।” সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চাশোর্ধ্ব জগবন্ধু এক সময়ে ট্রেনে হকারি করতেন। দুই ছেলে জন্মানোর আগেই ট্রেন থেকে পড়ে তাঁর পা কাটা যায়। পুতুল নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁদের বাড়িতে একটি মাত্র ঘর। সাধারণত সেখানে রাতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন পুতুল। জগবন্ধু কাছেই টাউনহলে রাত কাটাতেন।
তাঁদের দুই ছেলে রক্ষয় ও অজয় পুলিশকে জানিয়েছে, রবিবার রাতে বাবা তাদের টাউনহলে শুতে বলেছিলেন। সেই মতো তারা চলে যায়। পরে বড় ছেলে, বছর পনেরোর রক্ষয় জল নিতে এসে ঘর থেকে মায়ের গোঙানি শুনতে পায়। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে সে দেখে, মা রক্তের মধ্যে পড়ে রয়েছেন। বাবা হুইলচেয়ার নিয়ে কোথাও যাওয়ার তোড়জোড় করছেন। এর পরেই দুই ভাই ছুটতে ছুটতে থানায় গিয়ে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে দেখে জগবন্ধু হুইলচেয়ারে চেপে পালানোর চেষ্টা করছেন। জামাকাপড়ে রক্তের দাগ।
পুলিশের দাবি, জগবন্ধু জেরায় খুনের কথা কবুল করেছেন। তাঁর দাবি, পুতুলের সঙ্গে অনেকের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। ওই রাতে তিনি যৌনসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলে পুতুল বারবার বাধা দেন। তিনি বলপ্রয়োগ করার চেষ্টা করলে তাঁকে পাল্টা মারেন। সেই রাগেই তিনি স্ত্রীকে খুন করেছেন।
পুলিশ অবশ্য এই বয়ান বিশ্বাস করেনি। তাদের বক্তব্য, ঘরে টিভি চলছিল। আলো নেভানো ছিল। দরজা বন্ধ করে জগবন্ধু ঠান্ডা মাথায় ঘুমন্ত স্ত্রীকে খুন করেন বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। মৃতার ছোট ছেলে অজয়ের কথায়, “আমাদের জন্মেরও আগে বাবা পা কাটা যায়। এর পরেও মায়ের কষ্টে রোজগার করা টাকায় বাবা নেশা করতেন। টাকার জন্য মাকে অত্যাচারও করতেন। কিন্তু শেষে যে বাবার হাতে মাকে খুন হতে হবে, তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি।” |