সমস্যা হরেক রকমের। নতুন বোর্ডের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও প্রচুর। প্রথম বার মেয়রের চেয়ারে বসে তা যেন হাড়ে হাড়ে টের পেলেন অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। দায়িত্ব নেওয়ার পরে সোমবার থেকে কাজ শুরু করলেন তিনি। সারা দিন পুরভবনে আসা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলার পরে তাঁর বক্তব্য, “এক এক জনের এক এক রকম সমস্যা। সবার সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছি। একটু সময় লাগবে।”
দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতে জয়ী হয়ে টানা দেড় দশক বামেদের হাতে থাকা পুরসভা এ বার দখল করেছে তৃণমূল। শুক্রবার শহরের সিধো-কানহু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা শপথ নিয়েছেন। মেয়র হিসেবে অপূর্ব মুখোপাধ্যায় ও চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রভাত মণ্ডল শপথ নিলেও মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা হয়নি। যদিও তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, শপথগ্রহণের আগের দিনই কলকাতায় এক বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়, সাংসদ সুব্রত বক্সী, জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাসের উপস্থিতিতে মেয়র পারিষদদের নামও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। |
সপ্তাহের প্রথম দিন মেয়রের সঙ্গে পুরসভায় এসেছিলেন তৃণমূলের অন্য কাউন্সিলররাও। মেয়র অপূর্ববাবু তাঁর চেয়ারে বসে কাজকর্ম শুরু করে দিলেও নাম ঘোষণা না হওয়ায় মেয়র পারিষদদের চেয়ারগুলি এ দিন ফাঁকাই পড়েছিল। নতুন বোর্ডের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে প্রথম দিনই পুরসভায় এসেছিলেন অনেকে। মেয়র পারিষদেরা না থাকায় সবাই মেয়রের ঘরে ভিড় জমান। বিধায়ক হিসেবে জনতার দরবার সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। তাই এ দিনও তিনি ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত।
পুর নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মূলত যে সমস্যাগুলির কথা জানিয়েছিলেন, তার অন্যতম পানীয় জল। কোথাও নলকূপ বেহাল। কোথাও জলাধার হয়েছে, কিন্তু পাইপলাইন বসেনি। কোথাও আবার জলাধার বা পাইপলাইন, কিছুই নেই। কোনও জায়গায় পুরসভা ট্যাঙ্কে করে পানীয় জল পাঠায়, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা কম হওয়ায় অশান্তি বাধে। আগের পুরবোর্ড তিনটি পানীয় জল প্রকল্প হাতে নিয়েও সমস্যা মেটাতে পারেনি। নতুন নতুন বহুতল, শপিং মল, দোকান-বাজার, হোটেল, স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠায় জলের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। এ দিন পুরসভায় আসা অনেকেই নতুন মেয়রের কাছে জলের সমস্যা মেটানোর আর্জি জানান। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণপুরের জয়দেব ভট্টাচার্য, প্রীতম হাজরাদের দাবি, আগের বোর্ডকে বারবার বলেও সমস্যা মেটেনি। জলের সমস্যা মেটানোর দাবি জানান ভারতী কালীবাড়ি বস্তি, এসএন বোস রোড বস্তি, ভৈরবপুর, ন’ডিহা, সুকুমারনগর, সিমেন্ট কলোনি, নর্থ সারদাপল্লি, নঈমনগর, নতুনপল্লি প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা। মেয়র বলেন, “এই সমস্যা মেটাতে সুসংহত পদক্ষেপ করতে হবে।”
এ ছাড়াও, বস্তির রাস্তা ও নিকাশির সংস্কার, রেশন কার্ড নিয়ে সমস্যার কথাও এ দিন মেয়রকে জানান অনেকে। শ্যামপুরের মোহন মণ্ডলের আর্জি, দূষণ বেড়েছে। কিন্তু গাছ বাড়েনি। অবিলম্বে এলাকায় বৃক্ষরোপণ করা হোক। শপথগ্রহণের পরেই দূষণ প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অপূর্ববাবু। এ দিনও সে কথা জানান মেয়র।
দিনের শেষে অপূর্ববাবু বলেন, “নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে দিন কয়েক সময় লাগবে। সাধ্য মতো মানুষের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব।” |