জিপের জন্য ডিজেল দিতে রাজি না হওয়ায় চালকলে ঢুকে শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে কাটোয়া থানা এলাকার দাঁইহাট চৌরাস্তা মোড়ের একটি চালকলে এই ঘটনা ঘটে। জখম হন ৬ শ্রমিক। সোমবার বিকেলে সিটুর নেতৃত্বে জখম শ্রমিকেরা মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণমের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন ও দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবি জানান। মহকুমাশাসক বলেন, “এসডিপিও-কে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সিটুর অভিযোগ, রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কাটোয়া থানার এসআই সুদীপ্ত ঘোষের নেতৃত্বে কয়েক জন পুলিশকর্মী দাঁইহাট মোড়ের চালকলে যান। তাঁরা চালকলের নৈশ প্রহরীর কাছে গাড়ির জন্য ডিজেল দাবি করেন। নৈশ প্রহরী ভবকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, “মালিক বা ম্যানেজার কেউ না থাকায় ডিজেল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাই। তা শুনে গালিগালাজ করে পুলিশ চলে যায়।” অভিযোগ, এর বেশ কিছুক্ষণ পরে অন্তত ১০-১২ জন পুলিশকর্মী চালকলের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে ঘুমন্ত শ্রমিকদের মারধর করেন। তাতে কার্তিক ঘোষ, ওরম্বা ঘোষ, তাপস রজক, তমাল দে, মহাবীর গড়াই ও সনাতল পাল নামে ৬ জন আহত হন বলে অভিযোগ। |
জখম শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কাছে ৫ লিটার ডিজেল চান। তা দিতে পারবেন না জানানোয় আরও পুলিশকর্মী নিয়ে এসে তাঁদের মারে। চালকলের শ্রমিক সুরেশ ঘোষ, অজয় ঘোষ, তাপস রজকদের কথায়, “দরজায় শিকল তুলে ঘুমোচ্ছিলাম। লাথি মেরে দরজা ভেঙে ঢোকে পুলিশ।” চালকলের ম্যানেজার লাল্টু দাসের অভিযোগ, “কাটোয়া থানার পুলিশ মাঝে-মধ্যেই তেল চায়। এ দিন আমি না থাকায় শ্রমিকেরা তেল দিতে পারেনি। তার ফল এমন হবে, ভাবা যায় না।”
সিটুর আরও অভিযোগ, আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর বদলে তাঁদের নিয়ে রাতভর নানা গ্রামে তল্লাশি চালানো হয়। আহত সনাতনবাবুর দাবি, “পুলিশের লাঠির ঘায়ে আমার হাত-পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তা সত্ত্বেও ওরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। রাতভর তল্লাশি করার পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সদস্য সুরজিৎ রায় বলেন, “সকাল ৯টার পরে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।”
অভিযুক্ত এসআই সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ঘটনার কথা কার্যত স্বীকার করে নেন কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস। তিনি বলেন, “পুলিশের গাড়ি তল্লাশিতে যাচ্ছিল। দাঁইহাট চৌরাস্তায় তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় চালকলে যায়। সোমবার সকালে তেল ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলেও ওই পুলিশ অফিসার জানিয়েছিলেন। কিন্তু তেল দিতে অস্বীকার করায় শ্রমিকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। তার পরেই ঘটনাটি ঘটে যায়।” কাটোয়া থানা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত অফিসার ওসি-র সামনে আহতদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। |