ক্লাসঘর তৈরির কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। কেতুগ্রামের চরসুজাপুরে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন সমিতির অভিযোগ, তাঁদের মোটা টাকা না দিলে কাজ করতে দেওয়া হবে না, এমন হুমকি দিয়ে গত তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন আরএসপি থেকে সম্প্রতি তৃণমূলের যোগ দেওয়া দুই জনপ্রতিনিধি।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত নেতাদের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘অসৎ’ লোকজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই তাদের হাত থেকে কাজের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার দুপুরে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন কেতুগ্রাম ২ বিডিও হেমন্ত ঘোষ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পরিচালন সমিতি, কেন্দ্রের সহায়িকা, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে একটি তদারক কমিটি গঠন করে কাজ হবে। বিডিও বলেন, “আশা করি এ বার স্কুলে উন্নয়নের কাজ হবে।”
ব্লক দফতর সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত ক্লাসঘরের জন্য তিন মাস আগে সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে তিন লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা পেয়েছে চরসুজাপুরের ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি। অভিযোগ, আরএসপি-র টিকিটে জেতা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মুজিবর রহমান ও পঞ্চায়েত সদস্য বজলু মল্লিক সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই দুই জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে তৃণমূলের একাংশ নানা ভাবে ওই ক্লাসঘর গড়ার কাজে বাধা দিতে শুরু করে। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিডিও ওই কেন্দ্রে গিয়ে দু’পক্ষকে ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। |
পরিচালন সমিতির অভিযোগ, ওই দুই জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে গ্রামের কিছু যুবক স্কুলের কাজের বিনিময়ে মোটা টাকা দাবি করেন। তা দিতে না পারলে উন্নয়নের কাজের দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। পরিচালন সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলমের অভিযোগ, “এ ভাবে বারবার টাকা চেয়ে উন্নয়নের কাজ শুরু করতে দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও গত ২৪ জুন থেকে ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই দুই জনপ্রতিনিধি রবিবার সকালে কাজ বন্ধ করে দেন। আমরা কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।”
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, স্কুলে উন্নয়নের কাজ করতে হলে মুজিবর রহমান, বজলু মল্লিক-সহ ছ’জনের হাতে মোটা টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেছে। গ্রামবাসীদের অনেকেও দাবি করেন, এই অভিযোগ সত্য। এমনকী, মুজিবরের দাদা শেখ হাসান আলিও বলেন, “ঘটনার সময়ে আমি ছিলাম। টাকা না দিলে কাজ বন্ধ থাকবে বলে হুকুম জারি করা হয়।” কেতুগ্রাম থানার তরফে জানানো হয়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মুজিবর রহমান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা বলেন, “স্কুলের মুখ্য সহায়িকা অসৎ লোকজনদের দিয়ে কাজ করছিলেন। তাই বাসিন্দারা বাধা দেন ও তাঁদের হাতে কাজের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি জানান।” এই দাবিতে বাসিন্দারা তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বিডিও-র সঙ্গেও দেখা করেন। পাশাপাশি, পরিচালন সমিতির একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও জানান।
শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের মুখ্য সহায়িকা মনিদা বেগমও বিডিও-র কাছে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বিডিও দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে তদারক কমিটি গড়ে ক্লাসঘর তৈরির কাজ হবে বলে জানান। বিডিও বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে একটি তদারক কমিটি গড়া হয়েছে। এর পরেও কাজ বন্ধ থাকলে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে।” |