একটি চুল্লি আগেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অন্যটি দিয়ে কাজ চলছিল। সেটিরও ধোঁয়া বার করার ফ্যান বিকল হয়ে পড়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোচবিহার পুরসভার তৈরি শশ্মানের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদেহ দাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষায় মৃতদেহ দাহ করাতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হচ্ছে শোকার্ত পরিজনদের। তারপরেও অবশ্য কবে ফের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদাহ করা যাবে সে ব্যাপারে পুরসভা কর্তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। ওই ঘটনায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা শশ্মানের প্রবেশ গেটে যান্ত্রিক গোলযোগে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদাহ বন্ধ বলে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সেরেছেন। কোচবিহারের পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডু অবশ্য বলেন, “ধোঁয়া বার করার ফ্যান বিকল হয়ে পড়ায় সমস্যা হয়েছে। কলকাতা থেকে মেরামতির জন্য লোক এসেছেন। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” ওই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা আহমেদ জানান, দুটি চুল্লিই ফের চালুর চেষ্টা চলছে। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে কোচবিহার শহর লাগোয়া গুড়িয়াহাটি এলাকায় মরা তোর্সা নদীর পাড়ে শশ্মান ঘাটের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হয়। বসানো হয় বৈদ্যুতিক চুল্লি। কোচবিহার শহর তো বটেই লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারাও ওই বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদেহ দাহ করাতে আসেন। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই চুল্লির ফ্যান বিকল হয়ে পড়ে। তারপরেও কিছু দাহ করানো হয়। শশ্মান লাগোয়া এলাকায় ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ানোয় বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। বাসিন্দারা অভিযোগ জানালে ১৬ জুন থেকে ওই বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শবদেহ দাহ বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভা। শবদেহ দাহ করতে আসা বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বিজ্ঞপ্তিতে কবে পরিষেবা চালু হবে সে ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই। বৈদ্যুতিক চুল্লির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মী রিন্টু বণিক বলেন, “৬০ ফুট উঁচু চিমনি দিয়ে চুল্লির ধোঁয়া বের হয়। কোনও সমস্যা হয়নি। ফ্যান খারাপ হওয়ার পর এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ানোয় বাসিন্দারা দাহ করা নিয়ে আপত্তি জানান।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসে গড়ে ৬০ টির বেশি শবদেহ বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহ হয়। একটি চুল্লি মাঝেমধ্যে খারাপ হলেও তা মেরামতে এতদিন গরজ দেখাননি পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে একসঙ্গে একাধিক দেহ দাহ করাতে এলে অপেক্ষা করতে হত। চকচকার বাসিন্দা সুনীল দত্ত বলেন, “বর্ষায় গ্রামে দাহ করানো কষ্টকর। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মাত্র ১২০০ টাকায় দুঘন্টার মধ্যে দাহ হয়ে যায়। সেসব ভেবেই প্রতিবেশীকে দাহ করাতে এসেছিলাম। চুল্লি বন্ধ থাকায় তা হল না।” কোচবিহারের হরি দত্ত বলেন, “বৈদ্যুতিক চুল্লি খারাপ থাকায় কাঠ দিয়ে আত্মীয়ের দেহ দাহ করাতে হয়। বর্ষায় কাঠ জোগাড় করার দুর্ভোগ তো ছিলই, তার ওপর কাঠ ভিজে থাকায় সমস্যা আরও বেড়ে যায়।’’ |