‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটে তারা যোগ দেবে কি না, এখনই স্পষ্ট করল না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তবে শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশের বিরোধিতায় তাঁদের আন্দোলন-কর্মসূচি আপাতত চলবে বলে জানালেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
রবিবার দার্জিলিঙের জিমখানা হলে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এক বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ জানান, কাল, মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে নয়াদিল্লি যাবেন তিনি। সেখানে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করে শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মোর্চার আপত্তির কথা জানানো হবে। কলকাতায় ফিরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে একপ্রস্ত আলোচনা করতে চান গুরুঙ্গ। তার পরে পাহাড়ে ফিরে জিটিএ ভোট এবং আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে মোর্চা। যদিও মোর্চার অন্দরের খবর, দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই যে জিটিএ ভোটে যোগ দিতে চান, সে ব্যাপারে তাঁরা এ দিনের বৈঠকেও বার্তা দিয়েছেন গুরুঙ্গকে। |
দার্জিলিঙে বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ।—নিজস্ব চিত্র |
দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ এ দিন বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যদি পাহাড়ে জোর করে নির্বাচন চাপাতে চায়, তা করতেই পারে। দিল্লি ও কলকাতায় গিয়ে আমরা সমস্ত ব্যাপারে প্রণববাবু, চিদম্বরম এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। সেখান থেকে পাহাড়ে ফেরার পরেই জিটিএ ভোটে যোগ দেব কি না, জানাব।” তাঁর সংযোজন, “তরাই ও ডুয়ার্স আমার হৃদয়। শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ বাতিল করার দাবিতে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।”
মোর্চা সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বড় অংশও জিটিএ নির্বাচনে মোর্চার যোগ দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। ওই নেতাদের যুক্তি, দীর্ঘ দিন ধরে নানা আন্দোলন-অবরোধে বিরক্ত পাহাড়বাসী এখন পাহাড়ে অশান্তি চান না। জিটিএ ভোট মিটে গেলে পাহাড়ে ‘সুস্থিতি’ আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। এলাকাবাসীর এই ‘আবেগ’কে সম্মান দিতে ‘জনবিরোধী’ কোনও আন্দোলনের পথে না গিয়ে মোর্চার জিটিএ ভোটে যোগ দেওয়া দরকার। যদিও দলের আর একটা অংশের অভিমত, শ্যামল সেন কমিটির তরাই-ডুয়ার্সের মাত্র পাঁচটি মৌজা জিটিএ-তে সংযোজনের সুপারিশ করাকে মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের ‘ব্যর্থতা’ বলে মনে করছেন নিচুতলার কর্মীরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, “মোর্চার তরফে চার প্রতিনিধি শ্যামল সেন নেতৃত্বাধীন কমিটিতে থাকলেও, প্রত্যাশিত ফল হল না কেন?”
পাহাড়ের রাজনীতির নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এ দিনের বৈঠকে দলের অন্দরে দু’তরফের মত জেনে বিমল গুরুঙ্গ চাইছেন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে দলের সব নেতাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে। আরও কিছুটা সময় নিয়ে নিচুতলার সমর্থকদের বোঝাতে চাইছেন, দিল্লি গিয়েও তিনি সেন কমিটির সুপারিশের ব্যাপারে নিজেদের আপত্তি জানানোয় ব্যগ্র। খোদ মোর্চা সভাপতির দিল্লি যাওয়ার অন্যতম কারণ এটা। মোর্চার প্রতিনিধি দলে গুরুঙ্গ ছাড়াও দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান অমরসিংহ রাই, কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক রোহিত শর্মা এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য থাকবেন।
পক্ষান্তরে তরাই-ডুয়ার্সের পাঁচ মৌজাকে জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের বিরোধিতায় সরব হয়েছে মোর্চা-বিরোধী শিবিরের ‘আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’ও। রবিবার ফালাকাটার কমিউনিটি হলে পরিষদের রাজ্য নেতা বৈরাগী মিনজ বলেন, “সমতলের পাঁচটি মৌজাকে জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে।” |