বনগাঁ পুরসভা
সাফল্য দাবি পুরপ্রধানের, আরও কাজ দরকার বলছেন পুরবাসী
পুরসভার দু’বছর পূর্তি ঘটা করে পালন করা হল বনগাঁয়। ২০১০-এর ২২ জুন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য। পুর নির্বাচনের পর কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরসভা দখল করে। ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন কংগ্রেসের কৃষ্ণা রায়। এই দু’বছরে পুরবোর্ড প্রতিশ্রুতি মতো মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছে শুরু হয়েছে তারই হিসাবনিকাশ।
পুর এলাকা ঘুরে দেখা গেল, খয়রামারীতে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ শেঠের নামে প্রস্তাবিত শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চুল্লির দাবি দীর্ঘদিনের। নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে খয়রামারীতে যে শ্মশান রয়েছে তার পরিকাঠামোয় ঘাটতি আছে। চারদিক খোলা দু’টি লোহার বেদির উপর দাহ করা হয়। বৃষ্টি হলেই সমস্যা। দু’টির বেশি দেহ এলে অন্য জায়গায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হয়। ফলে দূষণ ছড়ায়। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের বিধায়ক তহবিল, সাংসদ গোবিন্দ নস্করের তহবিল ও পুরসভার নিজস্ব তহবিলের টাকায় চুল্লি তৈরি হচ্ছে। শিলান্যাসের পর কয়েক মাস কাজ থমকে ছিল। এখন অবশ্য কাজ চলছে জোরকদমে।
বনগাঁ ত্রিকোণ পার্কে পুরসভার আলোকসজ্জা।—নিজস্ব চিত্র।
২২টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি বনগাঁ পুরসভায় পরিবারের সংখ্যা ২৬ হাজার ৩২৭টি। যার মধ্যে দারিদ্রসীমার নীচে আছে ১৪ হাজার ৪৩১টি পরিবার। বনগাঁর মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল। সেই দাবি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাংসদ এবং পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আরও ২২টি নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “পুরমন্ত্রীর কাছে ওই প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি রিজার্ভার তৈরির জন্য অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” শনিবার পুরসভার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় টাউন হলে এক অনুষ্ঠানে দু’বছরে পুরসভার সাফল্যের বিবরণ নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ হয়। শহরের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা এবং দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের অর্থ সাহায্য করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের পরিষেবা উন্নত করতে স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে নতুন একটি অফিস খোলা হয়েছে। একটি করে ট্রাক্টর, ট্রলি এবং দু’টো গারবেজ অটো কেনা হয়েছে। শহরের জনবহুল এলাকায় ময়লা ফেলার জন্য অস্থায়ী ২২টি ফাইবার ভ্যাট বসানো হয়েছে। যানজটমুক্ত করতে ৫৭ জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ হয়েছে। তিনটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। বস্তি এলাকায় জল সরবরাহের জন্য ৪৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। দুঃস্থদের ৩৭টি ঘর মেরামত করা হয়েছে। বিধায়ক ও পুরসভা তহবিলের টাকায় কলঘাট, শিমুলতলা এবং পূর্বপাড়ায় স্নানের ঘাট তৈরির কাজ চলছে। তৃণমূল স্তরে পরিষেবা পৌছে দিতে ৭টি স্বাস্থ্য সাব-সেন্টার করা হয়েছে। সাংসদ তহবিলের টাকায় ডায়গনস্টিক সেন্টার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পুরসভা ও বিধায়ক তহবিলের টাকায় ত্রিকোণপার্ক এলাকায় আলো এবং দীনবন্ধু মিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন মনীষির মূর্তি বসানো হয়েছে। ৪টি প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার হয়েছে। স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। ৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু ও জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। নতুন লাইসেন্স এবং পুরনো লাইসেন্স রিনিউয়ের জন্য নিউ মার্কেটে শাা অফিস খোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ৫০ জন অস্থায়ী কর্মীর স্থায়ীকরণ হয়েছে। বহু পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। কয়েকটির সংস্কার চলছে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুনীল সরকারের কথায়, “নাগরিকেরাই বিচার করবেন দু’বছরে পুরসভায় কতটা কাজ হয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ কিছুটা হয়েছে। তবে এতদিনে আরও কাজ হওয়া উচিত ছিল।” সিপিএমের অভিযোগ, বনগাঁর নিকাশি ব্যবস্থা খুব খারাপ। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নিকাশিনালা তৈরি করতে হবে। দ্রুত বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শেষ করে তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিতে হবে।
একই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, শহরের সমস্ত ওয়ার্ডের আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। দিনেও রাস্তার আলো জ্বলে থাকে। শহরের মধ্যে যশোহর রোডের ধারে কোনও শৌচাগার তৈরি করা হয়নি। যানজটে সমস্যাও মেটেনি। তৈরি হয়নি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস। যত্রতত্র রাস্তার উফর গজিয়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড। বনগাঁর মানুষের সংস্কৃতি মঞ্চের চাহিদা দীর্ঘদিনের। তা এখনও করা হয়নি। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “বিএডিপি প্রকল্পে টাকা অনুমোদন হয়েছে। ললিতমোহন বাণী ভবন ভেঙে নতুন করে সাংস্কৃতিক মঞ্চ করা হবে। নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.