ইউরো ফাইনাল আর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মাঝে এখন দাঁড়িয়ে এক চেনা শত্রু। সি আর সেভেন। স্প্যানিশ লিগের মারকাটারি ফর্ম ইউরোতেও আমদানি করে ঝড় তুলেছেন যিনি। প্রায় একার চেষ্টায় দলকে সেমিফাইনালে তোলা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নামক এই ঝড়কে বুধবার তারা কী ভাবে সামলায় তার উপরেই নির্ভর করছে স্প্যানিশ আর্মাডার ভেসে থাকা।
ফুটবল বিশ্ব অন্তত তেমনটাই বলা শুরু করেছে।
পর্তুগিজরা অবশ্য এক বনাম এগারোর এই রোম্যান্টিকতায় কান দিচ্ছে না। তাদের দাবি, “আমরা মোটেই শুধুমাত্র রোনাল্ডো-নির্ভর নয়। প্রতিপক্ষের রক্ষণ চুরমার করায় নানিও কিছু কম যান না।” শনিবারের ফরাসি বিদায়ের নায়ক জাভি আলন্সো যে দাবি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, “শুধু ক্রিশ্চিয়ানোকে থামানো নিয়ে ভাবলেই চলবে না। ওদের অন্য উইঙ্গার নানিও যথেষ্ট বিপজ্জনক। ডিফেন্সটাও তেমনই জমাট। আমাদের নিজেদের খেলার উপর ফোকাস করে সেমিফাইনালে সেরাটা দিতে হবে।” একই সুর ইনিয়েস্তারও। বলেছেন, “আমাদের গোটা পর্তুগাল টিমটার বিরুদ্ধে খেলতে হবে, শুধু ক্রিশ্চিয়ানোর নয়। ওদের কিন্তু দারুণ দারুণ সব প্লেয়ার আছে।” |
কচি-কাঁচাদের ভিড়ে রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স |
তবু আলন্সো, সার্জিও রামোস বা ইকের কাসিয়াসের মতো রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ টিমমেট হোন বা ইনিয়েস্তা, জাবি বা ফাব্রেগাসের মতো তাঁর বার্সেলোনা প্রতিপক্ষরা, স্প্যানিশরা জানেন, পর্তুগিজ অধিনায়ক ঠিক কতটা বিপজ্জনক। মাত্র এপ্রিলেই নউ ক্যাম্পে রোনাল্ডোর দাপটে রিয়ালের কাছে বার্সেলোনার ২-১ হারের স্মৃতি ইনিয়েস্তার মনে এখনও টাটকা। অন্য দিকে, কাসিয়াস মানছেন, ক্লাবের সতীর্থ যখন শত্রুর ভূমিকায়, তখন গোলে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। ক্লাব পর্যায়ে মেসিকে আটকানো যতটা কঠিন, বুধবার পর্তুগিজ অধিনায়ককে আটকাতে গিয়েও ততটাই ঝক্কি পোহাতে হবে, জানেন স্পেন অধিনায়ক। কাসিয়াস বলেছেন, “মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো বিশ্বের সেরা দুই প্লেয়ার। পর্তুগাল ম্যাচটা দুর্দান্ত কিন্তু কঠিন যুদ্ধ হবে।” স্প্যানিশ রক্ষণে রোনাল্ডোকে থামানোর দায়িত্বে থাকবেন যিনি, সেই রাইট ব্যাক আলভারো আরবেলোয়াও রিয়াল মাদ্রিদেই খেলেন। শত্রু চেনা বলেই তাঁরা কিছুটা সুবিধায়, বলার চেষ্টা করেছেন আলোন্সো। তাঁর কথায়, “ক্রিশ্চিয়ানো গোটা মরসুম রিয়ালের হয়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে। কিন্তু ওর খেলা ভাল ভাবে জানি।”
স্পেন কোচ ভিনসেন্ট দেল বস্কিকে আবার ভাবাচ্ছে ক্লান্তি। সেমিফাইনালের প্রস্তুতির জন্য পর্তুগালের তুলনায় তাঁরা যে দু’টো দিন কম পাচ্ছেন, সেই ব্যাপারটা খচখচ করছে বিশ্ব এবং ইউরো কাপজয়ী কোচের মনে। বলেছেন, “পর্তুগালের তুলনায় প্রস্তুতির জন্য দু’টো দিন কম পাওয়া অবশ্যই একটা সমস্যা। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শেষের দিকটায় ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তবে সেটা স্বাভাবিক। আমাদের এখন যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিয়ে বুধবারের জন্য তরতাজা হয়ে উঠতে হবে।” তবে ইনিয়েস্তা মনে করছেন, সামনে যেখানে ইউরো-ইতিহাসের হাতছানি, সেখানে ক্লান্তি সমস্যা হবে না। “ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠার কোনও চেষ্টাই বাদ রাখব না। আরও একটা ফাইনাল খেলা থেকে আমরা মাত্র একটা ম্যাচ দূরে। সেটাই তো সব থেকে বড় প্রেরণা!” যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই সি আর সেভেন এখনও স্পেন নিয়ে চুপ। তবে একা হাতে ডাচ আর চেকদের ছুটি করে দেওয়ার পরে এ বার স্প্যানিশ আর্মাডা ডোবানোই যে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, সেটা জানার জন্য রোনাল্ডো ঘনিষ্ট হওয়ার দরকার নেই। গত বিশ্বকাপে হারার বদলা আছেই। রোনাল্ডোকে তাতাচ্ছে আরও একটা জিনিস-- স্পেনের হাতে কাপ দেখতে চান মেসি! |