|
|
|
|
পরিচারিকা সেজে গয়না নিয়ে উধাও, ধৃত ২ মহিলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
পরিচারিকা হিসেবে কাজে ঢুকে প্রথম দিনই আলমারি খুলে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না হাতিয়ে নিয়েছিল দুই মহিলা। এমনই অভিযোগে রবিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করল হুগলির শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম শেফালি মাইতি ওরফে বুচকি এবং দীপা সাউ ওরফে বুড়ি ওরফে মিনু। শেফালি কলকাতায় উল্টোডাঙার দাসপাড়া শীতলামন্দির এলাকায় উজির চৌধুরী রোডে ভাড়া থাকত। দ্বিতীয়জন
|
শেফালি |
|
দীপা। |
লেকটাউনের পাতিপুকুরে। রবিবার শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনকেই ৭ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই দুই মহিলা শ্রীরামপুরের এনএল গোস্বামী স্ট্রিটে অমিতকুমার রক্ষিত নামে এক আইনজীবীর বাড়িতে পরিচারিকার কাজে যোগ দেয়। পুলিশের দাবি, পরিচয় ভাঁড়িয়ে কাজ জোগাড় করে তারা। দীপা নিজের পরিচয় দিয়েছিল মিনু নামে। বাড়ি বর্ধমানের রসুলপুরে। শেফালিকে নিজের বোন বলে পরিচয় দেয় সে। অচিরেই অবশ্য ‘স্বমূর্তি’ ধরে দু’জন। অমিতবাবুর স্ত্রী অনসূয়াদেবী জানান, ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দুই মহিলা কাজে আসে। সকাল ১১টা নাগাদ পরিবারের স্থায়ী পরিচারিকা কোনও কাজে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পরে মিনু অনসূয়াদেবীকে এক গ্লাস হরলিকস্ তৈরি করে দেয়। তা খেয়ে অনসূয়াদেবী অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। তিনি এর পরে শৌচাগারে যান। মিনিট ১০-১২ বাদে শৌচাগার থেকে বেরনোর পরে শেফালি তাঁকে বলে, তারা দু’জন অন্য বাড়িতেও কাজ করে। সেখানে কাজ করে কিছুক্ষণ বাদে ফিরে আসবে। কিন্তু অনেক পরেও তারা না ফেরায় অনসূয়াদেবীর সন্দেহ হয়। তাঁর দাবি, দোতলায় ঘরে গিয়ে দেখেন আলমারি থেকে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না উধাও।
অনসূয়াদেবী ওই দিনই শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, আলমারিতে একটি বাক্সে গয়নাগুলি রাখা ছিল। আলমারির চাবি ছিল অন্য একটি আলমারিতে। সেখান থেকে চাবি নিয়ে ‘অপারেশন’ সারে ওই দুই পরিচারিকা। পুলিশের সন্দেহ, আগে থেকে কোনওভাবে বাড়ির খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছিল তারা। এ ক্ষেত্রে কেউ তাদের সাহায্য করেছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
তদন্তকারী অফিসাররা বিভিন্ন থানার রেকর্ড ঘেঁটে দেখেন মিনু, যমুনা সরকার, শঙ্কর মাইতি-সহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে রীতিমতো চক্র রয়েছে, যারা পরিচারিকা সেজে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে টাকাপয়সা, সোনাদানা হাতানোয় সিদ্ধহস্ত। শেষ পর্যন্ত চন্দননগর থানায় মিনু ও শেফালির ছবি পেয়ে যায় পুলিশ। ছবি দেখে অনসূয়াদেবী দু’জনকে শনাক্ত করেন। শনিবার শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠান ওই দু’জনকে ধরতে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের সাহায্যে শেফালিকে উল্টোডাঙা এবং দীপাকে লেকটাউন থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, দু’জনে মাঝেমধ্যেই বাড়ি পাল্টাতেন।
পুলিশের দাবি, জেরায় অপকর্মের কথা স্বীকার করে দুই মহিলাই। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গয়না উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন জেলায় পরিচারিকা সেজে চুরির যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে এই দুই মহিলার যোগ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে, পুলিশের বক্তব্য, অধিকাংশ বাড়ি থেকেই পরিচারিকাদের পরিচয় স্থানীয় থানায় জানানো হয় না। কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই পুলিশকে জানানো হয়। ফলে, পুলিশের পক্ষে তাদের সঠিক নাম-ঠিকানা জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন হলে এই ধরনের অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|