আন্দোলনে ‘অনর্থ’ চায় না রাজ্য
সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প ঘিরে বাড়তি সতর্কতা
তুন করে সিঙ্গুরে আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে টাটাদের প্রকল্প এলাকা ঘিরে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। অতি উৎসাহে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ যাতে সেখানে কোনও ‘অনর্থ’ ঘটিয়ে না ফেলেন, তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এবং তা আরও আঁটোসাঁটো করতে আজ, সোমবার সিঙ্গুরে যাওয়ার কথা আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহের। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন আরও কয়েকজন পুলিশ-কর্তা।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গুর আইনকে ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছিল। রায়ে ‘হতাশ’ না হয়ে প্রশাসনিক এবং দলগত ভাবে তিনি কৃষক-স্বার্থে আন্দোলন শুরু করতে চান বলে শনিবারই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার বীরভূমের পাড়ুইয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু তৃণমূল ও কৃষিজমি রক্ষা কমিটি যে আন্দোলন করছে, সেই আন্দোলনের পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষকদের জমি যাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।” দুর্গাপুরে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, আইনের বিভিন্ন ধারা দেখে দলীয় বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
বর্তমানে সিঙ্গুরের ৯৯৭.১১ একর জমি ঘিরে টাটাদের পরিত্যক্ত কারখানার নিরাপত্তার জন্য জেলার নানা থানার ৫০ জন পুলিশকর্মী কারখানা চত্বরের বিভিন্ন অংশে ক্যাম্প করে রয়েছেন। আগে কারখানায় টাটাদের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীও ছিল। কিন্তু সিঙ্গুর আইন করার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ওই কারখানা থেকে টাটাদের নিরাপত্তা রক্ষীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পুলিশ দায়িত্ব নিলেও এর পরে নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছে টাটা গোষ্ঠী। প্রকল্প এলাকার জিনিসপত্র চুরির অভিযোগও তোলে তারা। নতুন করে আন্দোলন-পর্বে টাটা গোষ্ঠী যাতে ফের একই প্রশ্নে সরব হতে না পারে, সে জন্য প্রথম থেকেই সক্রিয় হচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত প্রকল্প এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা, নষ্ট হয়ে যাওয়া ওয়াচ-টাওয়ার পুনর্নির্মাণ এবং আলোর ব্যবস্থা জোরদার করার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
টাটাদের প্রকল্প এলাকার ভিতরে থাকা পুলিশের ক্যাম্পগুলির একটি। মূল ফটকের কাছে। —ফাইল চিত্র
হুগলি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, রাজ্য সরকারের ক্ষমতায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে এ বার ঝুঁকি কম। কিন্তু আন্দোলনের প্রশ্নে শাসক দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্টজনদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে ‘অনভিপ্রেত’ কিছু ঘটলে তার দায় বর্তাবে সরকার তথা শাসক দলের উপরেই। আদালতের কাছেও রাজ্য সরকারকে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। তা ছাড়া, নকশালপন্থী কয়েকটি সংগঠনও আলাদা ভাবে আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়েছে। প্রথম দফার আন্দোলন-পর্বে (২০০৬-২০০৮) একাধিক বার আন্দোলনকারীদের একাংশের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ঢুকে ‘অশান্তি সৃষ্টির প্রবণতা’ দেখা গিয়েছে। এ বার সে সব ঠেকাতেই টাটাদের প্রকল্প ঘিরে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করতে আজ, সোমবার জরুরি বৈঠকে বসছে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সিঙ্গুরের ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’। কমিটির আহ্বায়ক তথা হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, “সিঙ্গুরের চাষিদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কী ধরনের আন্দোলন করা হবে, সেটা কমিটির সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই স্থির করা হবে।”
আন্দোলনের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা ছাড়াও সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষি ও খেতমজুর পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে ‘আর্থিক সাহায্য’ (মাসে এক হাজার টাকা) আরও বাড়ানো যায় কি না, সে ব্যাপারেও আলোচনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই সাহায্যের টাকা চলে এলেও তা বিলির ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রাপকদের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রায় চার হাজার মানুষকে ওই সাহায্য দেওয়া হবে। কিন্তু সিঙ্গুরে মাত্র তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং সেখানে কর্মী কম থাকায় প্রাপকদের ‘অ্যাকাউন্ট’ খোলার ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৮০০ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়েছে। ওই কাজ দ্রুত সারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে।
পাশাপাশি, সাপ্তাহিক ভাবে ‘অনিচ্ছুক’ চাষি ও খেতমজুর পরিবারগুলিকে চাল দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। রবিবারই বনগাঁয় দলীয় সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জন্য মাসে ৮ কেজি করে চাল শীঘ্রই দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশ জারি হয়েছে। জেলাশাসক দিন স্থির করলেই ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার কাজ শুরু হবে।”
সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেসও। কয়েকদিনের মধ্যেই আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি দল সিঙ্গুর যাচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি, সিঙ্গুর নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে কংগ্রেস। রবিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সিঙ্গুর নিয়ে ফের আন্দোলন করার চেয়ে কেন তারা মামলায় হেরেছে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত। নিজেদের ক্ষমতার উপরে ভর করে আবার পা বাড়ালে ভুল হবে!”
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সিঙ্গুর-আন্দোলনের প্রাক্তন ‘সহযোদ্ধা’দের নিয়ে টাউন হলে যে বৈঠক করেন, সেখানে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদীপবাবুর কথায়, “সিঙ্গুর-আন্দোলনে কংগ্রেসেরও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে। ফলে, কংগ্রেসকেও শনিবারের বৈঠকে ডাকা উচিত ছিল।” তবে, তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, সিঙ্গুর-আন্দোলনের সময় তৃণমূল নেতৃত্বাধীন ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’তে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে ছিল না।
সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের পাশে দাঁড়াতে আজ, সোমবার কলকাতায় মহাবোধি সোসাইটি থেকে মিছিল করার কথা রয়েছে নাগরিক সমাজের একাংশের।

(সহ-প্রতিবেদন: দেবারতি সিংহচৌধুরী, সীমান্ত মৈত্র ও সুব্রত সীট)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.