মৃত্যুকূপের দায় কার, প্রশ্ন রেখে চলে গেল মাহি
বাড়ির সামনে হাঁ হয়ে থাকা ৭০ ফুট গর্ত। পাঁচ বছরের মাহিকে গিলে খেয়ে ফেলল সেই পাতালমুখ।
৮৫ ঘণ্টার প্রার্থনা, শ্রম, আয়োজন বিফলে গেল।
শুধু মাহি নয়, মাহির মতো আরও কত ফুটফুটে বাচ্চা রোজ খেলে বেড়ায় এমন সব মরণফাঁদের মধ্য দিয়ে। ২০০৬ সালে ৬০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল প্রিন্স। সৌভাগ্যক্রমে বাঁচানো গিয়েছিল তাকে। তার পর এই ছ’বছরে অন্তত দশটা এমন ঘটনা ঘটল। বাঁচানো গেল না অধিকাংশকেই। বাঁচল না মাহিও। হাঁ-করা গর্তেরা অবশ্য টিঁকে যাচ্ছে বহাল তবিয়তেই।
কে খুঁড়েছিল গর্ত? অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি ‘নিরুদ্দেশ’। নাম, রোহতাশ তয়াল। হাইকোর্টের নির্দেশ, গুড়গাঁওয়ে কুয়ো খুঁড়তে গেলে ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে। তয়াল অনুমতি নেননি। ফৌজদারি মামলার সঙ্গে আদালত অবমাননার মামলাও হবে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু শুধু ‘রোহতাশ’কে দায়ী করেই কি মিটবে সমস্যা? ২০১০ সালেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সমস্ত পরিত্যক্ত কুয়োর মুখ বন্ধ করতে হবে। তার পরও কেন এমন সব গর্ত থেকে যাচ্ছে? বারবার একই ঘটনার পরও কেন টনক নড়ে না প্রশাসনের? ঘন বসতি অঞ্চলে পরিত্যক্ত কুয়ো বোজাতে বাসিন্দারাই বা কেন উদ্যোগী হননি? ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হবে।
তখনও আশা, হয়তো বেঁচে আছে মাহি। চেষ্টা চালাচ্ছে সেনা। ছবি: পি টি আই
উদ্ধারকাজে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত নয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে, গর্তে পড়ার ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় মাহি। অক্সিজেন, খাবার, জল ছাড়া অন্ধকার গর্তে পাঁচ বছরের শিশুর ৮৫ ঘণ্টা বেঁচে থাকার কথা নয়। কী করা যেত? মানেসর ইএসআই হাসপাতালের সিইও দীপক মাথুর বলেন, “কঠিন, কিন্তু শুধু অক্সিজেন দিয়েই হয়তো বাঁচানো যেত মেয়েটাকে।” মাহির কাছে কি পৌঁছে দেওয়া গিয়েছিল সেই প্রাণবায়ু? কুয়োর মুখ খুব সরু। খাবার বা জল পৌঁছনো না গেলেও অক্সিজেন পাম্প করা হয়েছিল। কখন? প্রথম ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে কি অক্সিজেন পেয়েছিল মেয়েটা? মাহির বাবা-মা বলছেন, “মাহি পড়ে যাওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যেই এসেছিল পুলিশ। কিন্তু কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই।” বেশ কিছু ক্ষণ পরে খবর দেওয়া হয় সেনাকে। তত ক্ষণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে অমূল্য সময়।
এগিয়ে এসেছিল একটি বেসরকারি সংস্থাও। তাদের আনা ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডার’-এই ধরা পড়েছিল, ৭০ ফুট নীচে ঠিক কোথায় রয়েছে মাহি। তবে কোনও নড়াচড়া ছিল না। ক্যামেরা নামিয়ে দেখা দেখা যায়, এক হাত বাড়িয়ে পড়ে রয়েছে নিস্তেজ দেহটা। তখনও ক্ষীণ আশা, হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে মাহি। হয়তো প্রাণ আছে দেহে। সমান্তরাল গর্ত খুঁড়ে এগোতে শুরু করে সেনা। মাহির কাছে পৌঁছনোর তিন মিটার আগে পথ আটকে দাঁড়ায় অতিকায় পাথর। যা নড়াতে গেলে ধসে পড়তে পারে মাটি। ড্রিলিং মেশিন চালালে পাথর ছিটকে ক্ষতি হতে পারে মাহির। কর্তব্য স্থির করতে না পেরে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল সেনা। পরে সেই মেশিন দিয়ে পাথর ভেদ করেই মাহির কাছে পৌঁছয় তারা।
পাথর ছিটকে ক্ষতি হয়নি মাহির। অনেক আগেই স্রেফ দম আটকে মারা গিয়েছিল সে। তবুও দুপুর দেড়টা নাগাদ গোটা দেশ টিভিতে চোখ রেখে বলে উঠেছিল, “ওই তো মেয়েটা!” দেহটাকে উপরে তুলেই উদ্ধারকারী দল ছুটেছিল হাসপাতাল। ৮৫ ঘণ্টা ধরে বাঁচিয়ে রাখা আশার আলো নিভল সেখানে।
২০ জুন গর্তে পড়ে যায় মাহি। এক দিন আগে ছিল তার জন্মদিন। সে দিনের হইচইয়ের পরেই যে অপেক্ষা করছে এই দুঃস্বপ্ন, ভাবেনি কেউ। ঠিক যেমন, বাড়ির সামনেই যে হাঁ করে আছে মৃত্যু, মাথায় রাখেনি কেউ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.