দুর্নীতি মোকাবিলা বরাবরই তাঁর রাজনীতির অন্যতম মূল মন্ত্র।
এ বার কেন্দ্রীয় স্তরে দুর্নীতি রোখার জন্য সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার
আর্জি নিয়ে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই দ্বারস্থ হলেন রাজ্যের এক বাম সাংসদ।
দেশের কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) নিয়োগে ‘স্বচ্ছতা’ আনার স্বার্থে কমিটি গড়ার দাবিতে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সিপিআইয়ের প্রবীণ সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। সেই সঙ্গেই সাংসদের প্রস্তাব, আর একটি সাংবিধানিক পদ নির্বাচন কমিশনার
নিয়োগের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক। কেন সিএজি নিয়োগ শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে না-রেখে ‘কলেজিয়াম’ মারফত হওয়া উচিত, সেই যুক্তি ব্যাখ্যা করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন গুরুদাসবাবু। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো তাঁর ওই প্রস্তাবের কথা জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ প্রত্যাশা করছেন এ রাজ্যের সাংসদ। |
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রথম দফায় মমতার পাশাপাশি গুরুদাসবাবু একই আর্জি জানিয়েছেন তামিলনাড়ু ও ওড়িশার দুই মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং নবীন পট্টনায়ককেও। কেন্দ্রের কাছ থেকে দাবি আদায়ের জন্য কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে সাম্প্রতিক কালে প্রায় একটি অক্ষ গড়ে তুলে এগোচ্ছেন মমতা। জাতীয় রাজনীতির সমীকরণেও তাঁর ভূমিকা ক্রমশ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠছে। সেই জন্যই গুরুদাসবাবু চাইছেন, সিএজি-র মতো কেন্দ্রীয় স্তরের ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে’ নিয়োগের স্বচ্ছতা রক্ষার দাবিতে সক্রিয় হন মমতা। একই ভাবে এগিয়ে আসুন জয়ললিতা, নবীনরাও। যাঁরা বিভিন্ন প্রশ্নে নিজেদের মত স্পষ্ট করেই জাহির করে থাকেন।
মমতাকে পাঠানো চিঠিতে গুরুদাসবাবু লিখেছেন, ‘সরকারি তহবিলের সদ্ব্যবহার, দুর্নীতি ও বেনিয়ম প্রতিরোধ এবং সংসদের নির্ধারিত রূপরেখার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সরকারি নীতির যথাযথ রূপায়ণ নিশ্চিত করতে প্রহরীর কাজ করে সিএজি। মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার (সিভিসি) নিয়োগের একটি পদ্ধতি আছে। কিন্তু সিএজি এবং নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। যার অর্থ সরকারই এঁদের বেছে নেয়’।
গোটা প্রক্রিয়াটি আরও ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করা এবং সাধারণ মানুষের মনে ভরসা জাগাতে গুরুদাসবাবুর প্রস্তাব, সিএজি এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে একটি কমিটি (কলেজিয়াম) গড়া হোক।
বর্তমান সিএজি-র মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। এক জন নির্বাচন কমিশনারের পদ শূন্য হয়েছে এ মাসেই। পরবর্তী পদক্ষেপের আগে সরকার যাতে ‘স্বচ্ছতা’র বিষয়টি মাথায় রাখে, তার জন্যই আসরে নেমেছেন প্রবীণ বাম সাংসদ। প্রসঙ্গত, বর্তমান নিয়মে সিএজি-র নামের প্রস্তাবক প্রধানমন্ত্রী এবং নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি। তবে তাঁর বেতন এবং চাকরির অন্যান্য শর্ত ঠিক হয় সংসদে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ই শেষ পর্যন্ত রাইসিনা হিলসে গেলে পরবর্তী সিএজি-কে শপথবাক্য পাঠ করাবেন তিনিই! রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে গড়ে-ওঠা রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে গুরুদাসবাবুর পদক্ষেপকে তাই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলতে হবে!
একের পর এক দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারি সামনে এনে ইউপিএ-২ সরকারকে বারবার ‘অস্বস্তি’তে ফেলেছে সিএজি। সেই জন্যই ওই পদে পরবর্তী নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলগুলির ‘সচেতন’ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন গুরুদাসবাবু। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সব দলের সংসদীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও এই ব্যাপারে কথা বলছি।”
প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সিপিএমের লোকসভার নেতা বাসুদেব আচারিয়াকেও তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। বাম সূত্রের খবর, লোকসভার আগামী অধিবেশনে বিষয়টি উঠতে পারে। তবে দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে চিঠি দেওয়ার আগে মমতার কাছে গুরুদাসবাবুর আবেদন ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
নবীন, জয়ললিতা সিপিআই সাংসদের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন। মহাকরণ থেকে এখনও তেমন কোনও বার্তা যায়নি। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, সব দিক বিবেচনা করার আগে মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে চান না। চার মাস আগেই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘটের দিন মাধ্যমিক থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছিলেন গুরুদাসবাবুর অনুরোধেই। এখন দেখার, সিএজি-প্রশ্নে তিনি ‘সাড়া’ দেন কি না। বিশেষত, প্রশ্ন যেখানে দুর্নীতি মোকাবিলা এবং স্বচ্ছতার। মমতারই মতে, যা রয়েছে তাঁর রাজনীতির কেন্দ্রে। |