সঙ্গে চায় কংগ্রেস-বিজেপি দু’পক্ষই
জাতীয় রাজনীতির নজর এখনও মমতার উপরে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে প্রাথমিক ধাক্কার পরেও জাতীয় রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং আগামী লোকসভা ভোটে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন বলেই মনে করছে কংগ্রেস-বিজেপি থেকে আঞ্চলিক দলগুলিও।
মুলায়ম সিংহ যাদব বিশ্বাসভঙ্গ করার ফলে আব্দুল কালামকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করতে পারেননি মমতা। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জয় নিয়ে বিশেষ প্রশ্ন নেই (যদিও আজ এক সাক্ষাৎকারে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাংমা বলেছেন, তিনি এখনও অলৌকিক কিছু ঘটার ব্যাপারে আশাবাদী)। মমতা শেষ পর্যন্ত ইউপিএ প্রার্থীকে ভোট দেবেন, এমন সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। এত কিছুর পরেও কিন্তু সনিয়া গাঁধী চাইছেন, তৃণমূল নেত্রী যেন জোট থেকে ছেড়ে বেরিয়ে না যান। আবার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ২০১৪ সালের আগে পুরনো শরিক তৃণমূলকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। দিল্লির রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’পক্ষের শীর্ষ নেতাদের ধারণা যে, লোকসভা নির্বাচনে মমতা ভাল ফল করবেন। উল্টো দিকে, আত্মবিশ্বাসহীন সিপিএম নেতারাও মনে করছেন না যে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন, এমনকী লোকসভা ভোটেও তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
এই অবস্থায় আঞ্চলিক নেতারাও মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাইছেন। যেমন, বিহারের নীতীশ কুমার, ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক, তামিলনাড়ুর জয়ললিতা। লোকসভা ভোট আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে যে এক করে দেখা উচিত নয়, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নীতীশ কুমারের বক্তব্য, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ব্যক্তিবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইউপিএ-র বিরুদ্ধে যে জনমত তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এক নতুন রাজনীতির ক্ষেত্র বড় হয়ে উঠছে। আমার মতে, সেখানে মমতা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করবেন।”
বস্তুত, মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া মিলে বিভিন্ন রাজ্যে এখন কংগ্রেসের অবস্থা ভাল নয়। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের ভোট থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের উপনির্বাচন, কংগ্রেসের ভরাডুবি চলছেই। আবার বিজেপিতে নেতৃত্বের সঙ্কট এতটাই তীব্র যে জাতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই পিছিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে নীতীশ, মমতা, নবীন, জয়ললিতা এই আঞ্চলিক নেতৃত্বের মধ্যে একটি যোগাযোগের সেতু তৈরি হয়েছে। এই নতুন অক্ষ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন মমতা, যে শক্তির নেতৃত্বও দিতে পারেন তিনি। এমনকী, এই অক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী উঠে আসতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
প্রণবকে সমর্থনের প্রশ্নে শুধু ইউপিএ নয়, এনডিএ-বামফ্রন্টও বিভাজিত। মমতারও তাঁকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী কি পূর্ণ সাংমাকে সমর্থন করবেন? এই প্রশ্নটিও তিনি কৌশলে ঝুলিয়ে রেখেছেন। মমতার সঙ্গে দেখা করতে সাংমা কলকাতা যেতে চেয়েছেন। সাংমার সঙ্গে দেখা করতে তৃণমূল নেত্রী রাজি হয়েছেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সাংমা কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু সাংমার সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক সৌজন্য দেখালেও এনডিএ সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন করতে চাইছেন না মমতা। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটদানে বিরত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
বিজেপি অবশ্য রাষ্ট্রপতি ভোটকে কাজে লাগিয়ে লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাসের চেষ্টায় নেমে পড়েছে। তাই নবীন, জয়া এবং মমতাকে এনডিএ- তে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না, সেই পথ খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “মমতা কেন সাংমাকে সমর্থন করবেন না, তা বিজেপি বোঝে। কিন্তু কংগ্রেস সম্পর্কে যে মমতার মোহভঙ্গ হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।”
কিন্তু বিজেপির পক্ষে বড় সমস্যা হল, আজও তাদের গায়ে সাম্প্রদায়িকতার তকমা লেগে রয়েছে। ফলে মমতার পক্ষে আর তাদের বন্ধু হওয়া কঠিন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যেখানে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ২৭ শতাংশ। সে কারণেই সরাসরি বিজেপির সঙ্গে না গিয়ে মমতা আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করার চেষ্টা করছেন। এখানে অবশ্য প্রশ্ন, আঞ্চলিক দলগুলি যতই ভাল ফল করুক, কংগ্রেস-বিজেপিকে বাদ দিয়ে দিল্লিতে সরকার গঠন কি আদৌও সম্ভব? গত লোকসভা নির্বাচনে বামেরা নবীন-জয়ললিতা-মায়াবতী-চন্দ্রবাবু প্রমুখকে নিয়ে একটি ফ্রন্ট গড়তে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু সাফল্য আসেনি। এ বার সাংমাকে সমর্থনের মাধ্যমে নবীন ও জয়াকে কাছে টেনে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টায় জল ঢালতে সচেষ্ট বিজেপি। মমতা আবার বিশ্বাসভঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও মুলায়ম সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলেননি। মুলায়মও কিরণময় নন্দের মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছেন। এখানেই শেষ নয়। দিল্লিতে মায়াবতীর যে সব সাংসদ কারাটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাঁরাই এখন মমতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্রিয়।
রাষ্ট্রপতি ভোটের পরে খুচরোয় বিদেশি লগ্নি বা পেনশন বিল নিয়ে মনমোহন সিংহের সরকার কতটা সাহসী হয়, সেটাও এখন দেখার। এবং সেই সব সিদ্ধান্ত মমতা কী ভাবে নেন, তার উপরেও তাঁর ইউপিএ সরকারে থাকা অনেকাংশে নির্ভর করছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.