পরিবহণ দফতর ও ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ যে নীচ তলা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলছে বারবার। রাজ্যের অন্য প্রান্ত দূরস্থান, খোদ কলকাতার উত্তর শহরতলি ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতেই ‘উল্টো নিয়ম’। কোনও ট্যাক্সি মিটারে যাবে না। চালকের নির্ধারণ করা ‘ভাড়া-চুক্তিতে’ যেতে হবে। কোথাও মিটারে গেলেও দিতে হবে বাড়তি টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, এ নিয়ে অভিযোগ করেও মেলে না সুরাহা। যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে মন্ত্রীর নির্দেশ এখানে কার্যত গৌণ।
যেমন, লেকটাউন মোড়। সেখানে যশোহর রোডের পাশে স্ট্যান্ডে পরপর দাঁড়ানো ট্যাক্সি। গন্তব্য জানাতেই চালকদের প্রতিক্রিয়া, “যাব। তবে মিটারের থেকে ৫০ টাকা বেশি লাগবে।” কেন বেশি, তা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হতেই চালকদের প্রতিক্রিয়া, “যাব না। ট্যাক্সি খারাপ।”
বারাসতের কলোনি মোড়ে আবার অন্য চিত্র। প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের বিমানবন্দর মোড়ে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি নিতে যেতেই চালকেরা জানালেন, “মিটারে যাব না। ‘চুক্তি’ মেনে যেতে হবে। ২০০ টাকা লাগবে।” কিন্তু বিমানবন্দর যেতে যেখানে মিটারে ১০০ টাকাও ওঠে না, সেখানে এত টাকা কেন দিতে হবে তা জানতে নিকটবর্তী ট্রাফিক পুলিশের দ্বারস্থ হলে সেই পুলিশকর্মীর প্রতিক্রিয়া, “নিজেরা কথা বলে মিটিয়ে নিন।” |
যাত্রীদের অভিযোগ, শহরতলির প্রায় যে কোনও এলাকায় ট্যাক্সি নিতে গেলেই মিটারের থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন চালকেরা। প্রতিবাদ করলে নাস্তানাবুদ হতে হয় যাত্রীদের। এ নিয়ে অভিযোগ করলেও এত দিন তেমন আমল দিত না ট্রাফিক পুলিশ। তার উপরে ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকায় ট্যাক্সি-ইউনিয়নের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি বলে জানান যাত্রীরা।
ট্যাক্সিচালকদের ‘দৌরাত্ম্য’ কতটা মারাত্মক, তা অবশ্য সম্প্রতি টের পেয়েছে বারাসত থানার পুলিশ। নিজেরা ‘ভুক্তভোগী’ হয়ে সেই ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে। অভিযুক্ত চালকের দাবি, সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক সার্জেন্ট ‘ঘুষ’ চেয়েছিলেন। আর ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, বেআইনি ভাবে ট্যাক্সি দাঁড় করানোয় জরিমানা করতে যান তিনি। বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ের ওই ঘটনায় দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনেন।
বারাসত শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ডাকবাংলো, চাঁপাডালি, কলোনি মোড় ও হেলাবটতলায় রাস্তার পাশেই আছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। সেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়েও থাকে মিটার ট্যাক্সি। ভাড়া করতে গেলেই মিটারে যেতে অস্বীকার করেন চালকেরা। বিমানবন্দর মোড় থেকে বারাসতের দিকের ট্যাক্সি পেতে সমস্যা হয় বেশি। স্থানীয়েরা জানান, কলকাতার জনবহুল এলাকায় যেতেও দ্বিগুণ ভাড়া ছাড়া উপায় নেই। শুধু বারাসত নয়, মধ্যমগ্রাম, বিমানবন্দর, বিরাটি, দমদম, এমনকী যশোহর রোড ও ভিআইপি রোডের আশপাশে লেকটাউন-বাঙুর মোড়ের স্ট্যান্ডগুলিতেও ট্যাক্সি ‘চুক্তি’ ছাড়া যেতে চায় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এ নিয়ে ট্যাক্সিচালকদের যুক্তি, ফেরার পথে যাত্রী মেলে না। তাই যাতায়াতের ভাড়া ধরে নেন তাঁরা। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য, কলকাতার দিক থেকে কোনও ট্যাক্সিই খালি ফেরে না।
এই ট্যাক্সিস্ট্যান্ডগুলির অধিকাংশই আগে ছিল সিটুর ছত্রছায়ায়। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে সেগুলি আইএনটিটিইউসি-র দখলে এলেও পাল্টায়নি পুরনো ব্যবস্থা। দলীয় মন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কী ভাবে ঘটছে এমন ঘটনা? জেলা আইএনটিটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত বলেন, “ট্যাক্সিচালকদের কিছু সমস্যা আছে। ফিরতি পথে ভাড়া মেলে না এটাও সত্যি। অনেক যাত্রীও আবার চুক্তিতে যেতে চান। তবে মিটার ছাড়া যেতে না চাওয়ার বিষয়টিতে নজর দেওয়া হচ্ছে।” সিটু-র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, “মিটার ছাড়া ট্যাক্সি সমস্যার সমাধান তো হওয়া উচিত, কিন্তু ট্যাক্সির কোন সমস্যারই বা সমাধান হয়েছে? ট্যাক্সি তো উঠেই যাচ্ছে। অটো সমস্যারও সমাধান হল কোথায়!” |