কথা ছিল অধিগ্রহণ করা হবে। সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে বাজারের উন্নয়নেও। অথচ, কেটে গিয়েছে তিন মাস। কিন্তু, মৌখিক ভাবে নগরোন্নয়ন দফতর থেকে পুরসভাকে বলা হলেও এখনও কোনও চিঠি পায়নি পুরসভা। উল্টে নিজেরাই টাকা ধার করে তিন মাসে ফের অধিকাংশ দোকান তৈরি করে ফেললেন হাতিবাগান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
দোকান গড়তে বিরাট অঙ্কের টাকা ধার করে এখন দেনায় জর্জরিত বাজারের প্রত্যেক ব্যবসায়ী। অভিযোগ, এই কাজে মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য। দু’লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। তবে তা-ও মেলেনি বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় সকলেই সরকারের মুখের দিকে চেয়ে। বিরাট এই খরচের মধ্যে শুধুমাত্র স্থানীয় কাউন্সিলর অতীন ঘোষ তিন লক্ষ এবং এলাকার বিধায়ক সাধন পাণ্ডে এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত ২২ মার্চ রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় হাতিবাগান বাজার। মাছ, সব্জি, আলু, ফুল, ফল, শাড়ি, বাসন নিয়ে বাজারে মোট সাতটি পট্টি ছিল। দোকানের সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। প্রায় দশ ঘণ্টার চেষ্টায় দমকল আগুন আয়ত্তে আনলেও দোকানগুলি বাঁচানো যায়নি। পোড়ার পরেই বাজারটি সারাতে শুরু করে পুরসভা। এগিয়ে আসেন স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অতীন ঘোষ। মালিক-পক্ষের কোনও সাহায্য মিলবে না জেনে বাজারের তিনটি ব্যবসায়ী সমিতি মিলে তৈরি হয় ‘কোর কমিটি’। ওই কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, পুরসভার পক্ষ থেকে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অতীনবাবু সেই কাজে সহযোগিতা করেন। চার দিনের মাথায় শুরু হয়ে যায় সব্জি বাজার। কিন্তু, স্থায়ী স্টলগুলি তৈরি করতে গিয়ে দোকানদারদের প্রচুর টাকা ধার করতে হয়েছে। এক-এক জনের খরচ পড়েছে প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার মতো। ব্যবসায়ীদের দাবি, সবটাই তাঁদের ধার করতে হয়েছে। কমিটির বক্তব্য, টাকার অভাবে এখনও প্রায় ৯০ জন ব্যবসায়ীর দোকান তৈরি করা যায়নি। |
ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মর্মে তালিকা তৈরি করে স্থানীয় থানা, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং বিধায়কের হাতে দেওয়া হয়। অভিযোগ, তবুও সরকারি স্তরের কোনও সাহায্য মেলেনি।
অতীনবাবু হাতিবাগান বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনের কথা স্বীকার করে বলেন, “দোকানিরা টাকা ধার করে বাজারটি খুব কম সময়ের মধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন। এটি প্রশংসনীয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা ব্যবসায়ীরা তৈরি করেছিলেন, তাতে অনেক সমস্যা ছিল।” বাজারের অধিগ্রহণ এবং উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন, মালিকদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলেই কলকাতা পুরসভা অধিগ্রহণ কিংবা উন্নয়নের কাজে এগোতে পারেনি। তা ছাড়া, মালিকদের মধ্যেও নানা ঝামেলা রয়েছে। তাঁদের সহায়তা ছাড়া এ বিষয়ে কিছু করা অসম্ভব।
কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, আগুনের পরে স্থানীয় বিধায়ক সাধনবাবু জানিয়েছিলেন, সরকার যাতে বাজারটি অধিগ্রহণ করে, সে বিষয়ে কথা বলবেন। এখন বাজার তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে, তবু বিধায়কের আর কোনও সাড়া মেলেনি। তবে সাধনবাবুর দাবি, তাঁর দফতরের পক্ষ থেকে চেক খুব তাড়াতাড়িই ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, “বাজারটি অধিগ্রহণ করতে ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মেয়রকে চিঠি দিয়েছেন।” মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সাধনবাবু ওই বাজার অধিগ্রহণের জন্য আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেটি বিবেচনার জন্য মেয়রের কাছে পাঠিয়েছি।” তবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চিঠিটি এখনও তাঁর হাতে পৌঁছয়নি। তবে তিনি বলেন, “অধিগ্রহণের কথা মৌখিক ভাবে আমায় বলেছেন ফিরহাদ হাকিম। চিঠি পেলে দেখব, কী ভাবে এগোনো যায়। তা ছাড়া, বাজারটির সব মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
তবে নতুন করে বাজার তৈরি হলেও সেখানে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা করা হয়েছে, সে নিয়ে রয়ে গিয়েছে সংশয়। ব্যবসায়ীদের কোর কমিটি জানিয়েছে, ওই বাজারের সব দোকানদারই অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র কিনেছেন। দমকল-কর্তৃপক্ষও বাজার পরিদর্শন করেছেন। তবে দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেছেন, “আগুনের পরে পরিদর্শন হলেও পুনর্নির্মাণের পরে ফের পরিদর্শন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।” |