এই প্রথম মুক্ত ও অবাধ ভোটে নির্বাচিত হলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট। প্রত্যাশা মতোই জিতেছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মহম্মদ মুরসি। তিনি ৫১.৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আজ এ কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কমিশনের কর্তা ফারুক সুলতান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুরসির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের আমলের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক।
মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয়ে মিশরে ইসলামপন্থীদের রাজত্ব কায়েম হল বলে দাবি কোনও কোনও শিবিরের। ব্রাদারহুডের স্লোগান ‘ইসলামই সমাধান’-এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেকে। কিন্তু অন্য শিবিরের দাবি, ব্রাদারহুডের নীতিতে ইসলামের উদারতার প্রতিফলন রয়েছে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার মুরসি ছাত্রজীবনের কিছুটা কাটিয়েছেন আমেরিকায়। নির্বাচনের আগেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, ক্ষমতায় এলে খ্রিস্টানদের নিজের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করবেন।
মুবারকের আমলে অবাধ ভোটের অভিজ্ঞতা হয়নি মিশরবাসীর। এ বার সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলেও মিশরে এখনও তাদের প্রভাব বজায় রেখেছে সেনাবাহিনী। এমনকী, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে সম্প্রতি একটি আইনও চালু করেছে তারা। নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ কতটা মসৃণ হয়, সেনাই বা সরকারকে কতটা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেয় সে দিকেই এখন নজর সারা বিশ্বের। |
বিপ্লব নয়। এ বার পরিবর্তনের উৎসব তাহরির স্কোয়ারে। রবিবার কায়রোয়। |
আজ ফল ঘোষণার আগেই নিজেদের জয়ের কথা ঘোষণা করেন মুরসি-শফিক, দুই নেতার অনুগামীরাই। ফলে, উত্তেজনা দেখা দেয় দেশ জুড়ে। নির্বাচন কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রার্থীরা ভোট নিয়ে মোট ৪৬৬টি অভিযোগ করেছিলেন। সেগুলির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, তাতে ফলের কোনও পরিবর্তন হবে না।
মুবারক-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল তাহরির স্কোয়ার। আজ সেখানে ভিড় জমান মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা। ফল ঘোষণার পরে উল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। শুরু হয় বাজি পোড়ানো, স্লোগান দেওয়া। ফের জনসমুদ্র তাহরির স্কোয়ার। তবে আগের মতো বিক্ষোভে উত্তাল নয়, আবেগে-উচ্ছ্বাসে উদ্বেল। গোলমালের আশঙ্কায় বাড়তি সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করেছিল প্রশাসন। আকাশে চক্কর দিয়েছে সামরিক হেলিকপ্টার। মুরসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল হুসেন টানটাউই। মুরসিকে অভিনন্দন জানিয়েছে আমেরিকাও। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি বলেছেন, মুরসি সরকার ‘শান্তিরক্ষার স্তম্ভ’ হিসেবে কাজ করবে বলে তাঁদের আশা।
আদতে নীল নদ উপত্যকার শারকিয়া প্রদেশের বাসিন্দা মুরসি তাঁর মার্কিন শিক্ষাদীক্ষা ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে ব্রাদারহুড নেতৃত্বের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন না। কিন্তু সংগঠনের নিচু স্তরের কর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামই ঘোষণা করা হয়। আজ তাঁর হাতে মিশরের দায়িত্ব।
|