ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সীমান্ত-সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আগামী মাসের গোড়ায় বৈঠকে বসতে চলেছে দু’দেশ। ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী বদলের পরে এই প্রথম কূটনৈতিক স্তরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চালাবে দু’দেশ। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজা পারভেজ আশরফ শপথ নেওয়ার পরে ইসলামাবাদের ভারত সংক্রান্ত নীতির কোনও তারতম্য ঘটল কি না, তা দেখার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছে সাউথ ব্লক। বিদেশসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে যার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ইতিমধ্যেই নয়া পাক প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, “দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত।” তবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ব্যাখ্যা, এই ‘আশাবাদ’ অনেকটাই কূটনৈতিক সৌজন্য। এটা ঠিকই যে, কোনও বিশেষ রাষ্ট্রনেতা নয়, ভারত সর্বদাই বলে এসেছে, পাকিস্তানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় থাকবেন তার সঙ্গেই ‘কাজ’ করতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি। পারভেজ মুশারফ থেকে ইউসুফ রাজা গিলানি এই নিয়মের অন্যথা হয়নি। তা ছাড়া ভারতের কূটনৈতিক কর্তাদের বক্তব্য, গিলানিই থাকুন বা আশরফ সে দেশের সর্বময় ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতেই। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্যসূচি পর্যন্ত স্থির করেন পাক সেনা নেতৃত্ব। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, থিম্পু-বৈঠকের পরে গিলানির সঙ্গে মনমোহনের একটা ব্যক্তিগত সমীকরণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। গিলানিকে ‘শান্তিকামী ব্যক্তিত্ব’ হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন মনমোহন। গিলানির বিদায়ের পর পাক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা আদৌ থাকে কি না, সেটাও দেখে নিতে চাইছে বিদেশ মন্ত্রক।
ইসলামাবাদের সঙ্গে সামগ্রিক আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে অবশ্য কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে সাউথ ব্লকে। এটা ঠিকই যে, সাম্প্রতিক অতীতে খুব বড় কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য যে বাড়তি পথ হাঁটার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মনমোহন, তাতে তেমন ইতিবাচক সাড়াও মেলেনি। গত মাসে দু’দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে স্থির হয় যে, ভিসা ব্যবস্থাকে আরও খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি হবে। ভারতের দিক থেকে সমস্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছে পাকিস্তান। সিয়াচেন এবং স্যার ক্রিক নিয়েও ইসলামাবাদ সংবাদমাধ্যমে অনেক আশাব্যঞ্জক বিবৃতি দিলেও আলোচনা কার্যত ভেস্তে গিয়েছে।
গত এপ্রিলে নয়াদিল্লি এবং অজমের সফরে এসে পাক প্রেসিডন্ট আসিফ আলি জারদারি প্রধানমন্ত্রীকে সে দেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মনমোহন সে সময়ে জানিয়েছিলেন, যদি অর্থবহ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়, তা হলেই তিনি যাবেন। আপাতত পাকিস্তানের ভিতরের যা ডামাডোল চলছে, তাতে চট করে ‘অর্থবহ’ কিছু হওয়ার আশা দেখছে না ভারত। জুলাই মাসে পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের সঙ্গে বৈঠক করতে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের ইসলামাবাদে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্থির হয়েছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল করে বুঝে তবেই কৃষ্ণ সে দেশে যাবেন। মনমোহনের পাক যাত্রার বিষয়টিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। |