ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনের (ডিপিএসসি) চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করল কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৩ জুলাই থেকে এই বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হবে বলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মীরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। যদিও কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখনই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের কোনও পরিকল্পনা নেই।
চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএলের অধিগৃহীত। ২০ বছরের জন্য তা ইসিএলের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল ডিপিএসসি। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ লিজের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষ লিজের মেয়াদ বাড়ায়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য ডিপিএসসিকে কয়লাও দেয়নি। যে কয়লা মজুত ছিল তা দিয়ে ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছে ডিপিএসসি। তার পর থেকে কেন্দ্রটি উৎপাদনশূন্য অবস্থায় রয়েছে। |
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ব দরপত্র ডেকে তাঁরা ইচ্ছুক সংস্থাকে এই কেন্দ্রটি চালানোর জন্য লিজ দেবে। কিন্তু গত মে মাস পর্যন্ত তিনটি দরপত্র ডাকলেও কোনও সংস্থা কেন্দ্রটি লিজ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ জানিয়ে আবেদন করেনি। এমনকী, ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষও আবেদন করেননি। ডিপিএসসি-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে যেগুলি আমরা মানতে পারব না। তাই আবেদন করিনি।”
জ্যোর্তিময়বাবু জানান, লিজ না পাওয়ায় এবং কয়লা না মেলায় তাঁদের আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’শো কর্মীকে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় তাঁরা গত মার্চে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তার মেয়াদ ফুরিয়েছে ২৩ জুন। জ্যোর্তিময়বাবু বলেন, “ওই দিন পর্যন্ত এক জনও স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেননি। কিন্তু আমাদের পক্ষে বন্ধ সংস্থার শ্রমিকদের আর বেতন মেটানো সম্ভব নয়। তাই ২৩ জুলাই থেকে কারখানায় কর্মবিরতি জারি হবে। সে দিন থেকে শ্রমিক-কর্মীরা আর বেতন বা কোনও ভাতা পাবেন না।”
শনিবার বিকেলে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেই শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। একাধিক শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাঁচাও কমিটি’ সাধারণ বৈঠক ডেকে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। তাদের দাবি, ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সহজ শর্তে কেন্দ্রটি লিজ নিয়ে উৎপাদন শুরু করতে হবে। সংস্থার আইএনটিটিইউসি শাখার সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তীর দাবি, “কেন্দ্রটি বন্ধ হলে ২০০ জন শ্রমিকের ভবিষ্যত অন্ধকারে ডুবে যাবে। আমরা তা মানব না। যেমন করেই হোক তা লিজ নিতে হবে।” সিটুর শাখা সম্পাদক গৌরচন্দ্র দত্তের কথায়, “দু’পক্ষকে নমনীয় হয়ে সমস্যা মেটানোর আবেদন করেছি।”
ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হবে না। জ্যোতির্ময়বাবুর দাবি, সহজ শর্তে কেন্দ্রটি লিজ নিতে তাঁরা আগ্রহী। কিন্তু ইসিএল কর্তৃপক্ষ রাজি না হলে তাঁদের কিছু করার নেই। |