বলা যায় গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া!
একে পলি ও আবর্জনা জমে গঙ্গার নাব্যতা কমে গিয়েছে। এর ওপর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প চালিয়ে গঙ্গা থেকে জল তোলায় পলি ও আর্বজনা হাওড়ার পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের ‘সাকশন পাইপে’ বা জল টানার পাইপে ঢুকে গিয়ে চরম বিপত্তি ঘটিয়েছে। পাইপ লাইনে পলি জমে যাওয়ায় সাকশন পাইপে পর্যাপ্ত জল উঠছে না। স্বভাবতই তীব্র গরমের সঙ্গে শহরে জলের হাহাকার শুরু হয়েছে।
হাওড়া পুর এলাকায় জল সঙ্কটের এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন হাওড়া পুরকর্তৃপক্ষ। শনিবার সে কথা তাঁরা জানালেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। হাওড়ার জল সঙ্কটের কারণ খতিয়ে দেখতে এ দিন পদ্মপুকুরে যান মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের কৃষিবিপণনমন্ত্রী ও মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায়। দুই মন্ত্রী প্রকল্পের আধিকারিক ও পুরকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুরকর্তারা মন্ত্রীদের জানান, ১৫ দিনে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের উৎপাদন ৫৮ মিলিয়ন গ্যালন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-৪৫ মিলিয়ন গ্যালন। ফলে এক মাস যাবৎ তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন শহরের মানুষ।
পুরমন্ত্রী জানতে চান, এতদিন সাকশন পাইপ পরিষ্কার করা হয়নি কেন? পুরসভার পক্ষ থেকে জলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সমীর সাহা বলেন, “এক বছর আগেই পাইপ দু’টি পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু ফের পলি জমায় বিপত্তি।” বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার জল সরবরাহ বন্ধ রেখে দু’টি পাইপ পরিষ্কার হবে। মন্ত্রীর আশা, পাইপ পরিষ্কার হলে আরও ৫ থেকে ৮ মিলিয়ন গ্যালন জল বেশি পাওয়া যাবে। তাতে জল সঙ্কটের কিছু সুরাহা হবে।
পুরমন্ত্রী পরে বলেন, “মধ্য হাওড়ায় জল সঙ্কট মেটানোর জন্য দু’ধরনের পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। একটি হল ওলাবিবিতলার কাছে বেজপুকুরের পাশে একটা বুস্টিং স্টেশন করে সমস্যার সমাধান করা। অন্যটি হল টিকিয়াপাড়া বুস্টিং স্টেশন থেকে পাইপের মাধ্যমে মধ্য হাওড়ায় জল আনার ব্যবস্থা করা।” মন্ত্রীরা পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প ঘুরে দেখে জানান, হাওড়া শহরের একমাত্র এই জলপ্রকল্পের অবস্থা ভাল নয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। পুরমন্ত্রী বলেন, “স্রেফ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরসভার ৯ টি পাম্পের মধ্যে ৩টি খারাপ। গঙ্গার পাড়ে (ইনটেক পয়েন্টে) জল তোলার জন্য তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি কাজ করছে। তাই জল বেশি তোলা যাচ্ছে না। সরবরাহ কমে যাচ্ছে।”
জল শোধনের জন্য ব্যবহৃত ক্লোরিন প্ল্যান্টের ৬ টি মেশিনের মধ্যে ৪টি খারাপ বলে জানান পুরমন্ত্রী। একই অবস্থা ‘ফিল্টার বেডে’-রও। কর্মীরা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, ৬টি ফিল্টার বেডের মধ্যে ৪ টি অকোজো। সব ঘুরে দেখে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আশিস সেনকে সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দেন। এ জন্য প্রয়োজনে সবরকম সরকারি সাহায্যের আশ্বাসও দেন মন্ত্রী। |