নদীতে জলাভাবে উৎপাদনে টান
বর্ষার ঢিলেমিতে সস্তার ভুটানি-বিদ্যুতেও ঘাটতি
খাতায়-কলমে বর্ষার মরসুম হলেও টানা বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে ভুটান ও সিকিমের নদীতে-নদীতে জলাভাব। যার জেরে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় ক্ষমতা অনুপাতে বিদ্যুৎ তৈরি করা যাচ্ছে না। চাহিদামতো বিদ্যুৎ আসছে না পশ্চিমবঙ্গেও।
অন্যান্য বছর এই সময়টায় পশ্চিমবঙ্গ যেখানে সিকিম-ভুটান থেকে রোজ গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে থাকে (ভুটান থেকে ৫৪০, সিকিম থেকে ২১০), এ বছর সেখানে দুর্বল বর্ষার সুবাদে দেড়শো মেগাওয়াটের বেশি মিলছে না। ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট। কত দিন চলবে এ ভাবে?
রাজ্যের এক বিদ্যুৎ-কর্তা বলেন, টানা দু’-তিন দিন বৃষ্টি না-হলে ভুটান-সিকিমের নদীগুলো ভরে উঠবে না। অর্থাৎ ওখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমস্যা আগামী কিছু দিন বজায় থাকবে। অন্যান্য বছর ভুটানে জুনের গোড়ায় বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় জলবিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে। সমস্যায় বিশেষ পড়তে হয় না। ফি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা সিকিম-ভুটানের জলবিদ্যুৎ কিনে থাকে পশ্চিমবঙ্গ।
ভরা বর্ষার মরসুমে ভুটান মোটামুটি ১৩৫০ মেগাওয়াটের মতো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। তার ১৫০-২০০ মেগাওয়াট নিজেদের কাজে লাগিয়ে উদ্বৃত্ত সবটাই ভারতে রফতানি করে দেয় থিম্পু। এবং ওই ভুটানি বিদ্যুতের ৪০ শতাংশেরই খরিদ্দার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বাকিটা কেনে ভারতের অন্যান্য রাজ্য, জাতীয় গ্রিড মারফত। কিন্তু এ মরসুমে বর্ষার খামখেয়ালিপনায় ভুটানে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন মার খাচ্ছে, একই ভাবে সস্তায় বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ হারাচ্ছে বণ্টন সংস্থা। কারণ ভুটানের কাছ থেকে রাজ্য বিদ্যুৎ কেনে প্রতি ইউনিট দু’টাকা দরে, যাকে যথেষ্ট কমই বলা যায়।
তা হলে এই গরমে বিদ্যুৎ চাহিদা যখন তুঙ্গে, তখন রোজ ছ’শো মেগাওয়াট ঘাটতি রাজ্য মেটাচ্ছে কী করে?
বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা: অন্যান্য বছর সিকিম-ভুটান থেকে জোগান শুরু হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, বর্ষার মরসুমে বিদ্যুতের চাহিদা এমনিতেই কিছুটা কমে যায়, আবার কয়লা ভিজে যাওয়ায় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। “এ বার ভুটান-সিকিমের জোগান না-থাকায় ঘাটতি মেটাতে নিগমের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বাড়তি উৎপাদনের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে। বাকি সামান্য কিছুটা কিনতে হচ্ছে বাজার থেকে।” বলেন ওই কর্তা।
ভুটান সরকারের কোষাগারে আয়ের একটা বড় উৎসই হল জলবিদ্যুৎ। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের খবর: ভুটানের মোট রাজস্ব আদায়ের ৭০% আসে ভারতে বিদ্যুৎ বেচে। এবং তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবদান ২৮%। মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিল্লি ভুটানকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত যাবতীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। চেষ্টা চলছে, যাতে ২০২০ সালের মধ্যে ভুটানে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। তাতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যও উপকৃত হবে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বলতে বড়জোর ১৭০ মেগাওয়াট। তবে উত্তরবঙ্গের তিস্তাবাজারে এবং রঙ্গিত নদীর উপরে বণ্টন সংস্থা তাদের নিজস্ব দু’টি প্রকল্পের কাজ সেরে ফেলেছে। আগামী অর্থবর্ষের মধ্যে (২০১৩-১৪) সে দু’টো চালু হয়ে যাওয়ার কথা। প্রতিটি থেকে বিদ্যুৎ মিলবে ২৬০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএইচপিসি তিস্তাবাজারের নীচে দু’টি জলবিদ্যুৎ ইউনিটের কাজ শেষ করেছে। ওই দু’টিতে ২৯২ মেগাওয়াট করে উৎপাদন হবে, যার পুরোটা রাজ্য কিনবে বলে চুক্তি করেছে।
ফলে আশা করা হচ্ছে, আগামী দু’-তিন বছরে রাজ্যের গ্রিডে তাপবিদ্যুতের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎও উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নেবে। তাও ভুটানের উপরে নির্ভরতা কমানো যাবে না বলে জানান রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.